অনুসন্ধান নিউজ :: উপাচার্য ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আলোচনা করতে ঢাকায় আসছেন বলে দুপুরে জানালেও বিকেলে মত পাল্টেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
তারা জানিয়েছেন, ঢাকায় নয়, আলোচনা হবে সিলেটেই। সেজন্য শিক্ষামন্ত্রীকে সিলেট আসতে হবে অথবা আলোচনা ভিডিও কলে হবে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাদিয়া আফরিন এই কথা জানিয়েছেন।
তিনি শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জানান, শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাবে ঢাকা যেতে রাজি হয়েছিলেন। এক ঘণ্টা সময় চেয়েছিলেন তাদের মধ্য থেকে কারা যাবে সেটি সিদ্ধান্ত নিতে। তবে পরে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত পাল্টানো হয়।
সাদিয়া বলেন, ‘এখানে আন্দোলনকারীদের ফেলে ঢাকা যাওয়া সম্ভব না। আলোচনার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে সিলেট আসতে আহ্বান জানিয়েছি। কিংবা ভিডিও কলেও আলোচনা হতে পারে।’
সাদিয়া জানান, তাদের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষে আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলকে জানানো হয়েছে। তিনি মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের জানাবেন।
এর আগে শুকবার দুপুর ৩টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে আলোচনার জন্য তাদের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা যাবে।
এক হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে গত ১৩ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে আন্দোলন মোড় নেয় উপাচার্য পদত্যাগের এক দফা দাবিতে।
এই দাবি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ফোনে শুক্রবার দুপুরে আন্দোলনরতদের সঙ্গে কথা বলেন। সংবাদমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে লাউড স্পিকারে তিনি আলাপ করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের সন্তানরা ভালো থাকবে। তাদের যেন কোনো কষ্ট না হয়। ক্যাম্পাসও ঠিক থাকবে।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপার আছে। আমরা তাতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে চাই না। তবে শিক্ষার্থীরা কষ্ট পাবে, এটাও চাই না। সব সমস্যার সমাধান আছে। এটারও নিশ্চয় আছে। আলোচনার মাধ্যমে সেই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪-৫ জন যদি আসেন, শিক্ষক সমিতির নেতারাও যদি আসেন, তবে আমরা আলাপ করে একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে আসবেন। পরে নিজেদের মধ্যে যেন ঝামেলা না হয়।’
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। সন্ধ্যার আগেই আমাদের ৫ জন ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে যাবেন। আশা করছি, মন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নেবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় গেলেও অনশন যথারীতি চলবে।’
এরপর প্রতিনিধি দল ঠিক করতে এক ঘণ্টা সময় নেন তিনি। এর মধ্যেই আন্দোলনকারীরা মত পাল্টে বিকালে জানান, তারা ঢাকা যাবেন না।
এর আগে শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে ক্যাম্পাসে যান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনসহ কয়েকজন নেতা। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এর পর তারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের বাসভবনেও যান।
সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শফিউল আলম নাদেল। তার আগে সাংগঠনিক সম্পাদকের মোবাইল ফোনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
নাদেল বলেন, ‘এভাবে অচলাবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। আমাদের সন্তানদের এই কষ্ট মেনে নিতে পারছি না।’
‘শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা নিয়ে এখানে এসেছি। দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করব। উপাচার্যও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি। তা হলো উপাচার্যের পদত্যাগ। এই দাবি আদায় না হলে আমরা আন্দোলন থেকে সরছি না। প্রয়োজনে আমরা মারা যাব।’
এদিকে অনশনকারীদের মধ্যে অসুস্থ হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা সেখানেও অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেয়াদের সবার স্যালাইন চলছে।