শিরোনাম :
সিলেট থেকে পায়ে হেঁটে হজ করতে যাত্রা শুরু করল ফয়সল আহমদ সাগর কাউন্সিলর আজাদের বাসভবনে হামলা, সিসিক মেয়র ও কাউন্সিলরদের নিন্দা কাউন্সিলর আজাদুর রহমানের বাসায় হামলা : দুর্বৃত্তদের খুঁজছে পুলিশ খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায়-নগরীর ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যাগে দোয়া মাহফিল খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায়-নগরীর ৮,৯ ও ৩৭নং ওয়ার্ড বিএনপির যৌথ উদ্যাগে দোয়া মাহফিল সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক আন্তর্জাতিক নির্যাতন বিরোদী দিবস উপলক্ষে বিএমবিএফ এর আলোচনা সভা সিলেটে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বৃক্ষরোপণ সিলেটে বন্যার পানি নামছে ধীরে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সিলেট ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল

টিসিবির ট্রাকের পেছনে মানুষের ঢল

রিপোর্টার নামঃ
  • সোমবার, ৭ মার্চ, ২০২২
  • ১৫১ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক :: দেশের ১ কোটি মানুষকে কম দামে ৬ পণ্য দিতে মাঠে নামল সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি। গতকাল রোববার রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ১২৫টি স্পটে কম দামে এই পণ্য বিক্রি শুরু করল টিসিবি। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সারা দেশে বিক্রি শুরু হবে আগামী ১৫ মার্চ থেকে। তবে এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর গতকাল ঢাকায় পণ্য বিক্রি শুরু হলে টিসিবির ট্রাকের পেছনে মানুষের ঢল নামে। দীর্ঘ ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা অপেক্ষার পর তবেই ভাগ্যে জুটেছে পণ্য। অবশ্য একই ব্যক্তি যাতে বারবার পণ্য নিতে না পারে তার জন্য অনেক ডিলারকেক্রেতার হাতে নির্বাচনের সময় ব্যবহৃত অমোচনীয় কালি দিতে দেখা গেছে।

টিসিবি সূত্র জানায়, রোজার আগে এবং রোজার মধ্যে দুই দফায় এই এক কোটি পরিবারকে পণ্য দেওয়া হবে। কোন পণ্য কী দামে এবং এক পরিবারকে কী পরিমাণে পণ্য দেওয়া হবে সেটিও চূড়ান্ত করেছে টিসিবি। প্রতি পরিবারকে ৫৫ টাকা দরে ২ কেজি চিনি, মসুর ডাল ২ কেজি ৬৫ টাকা দরে, সয়াবিন তেল ২ লিটার ১১০ টাকা দরে, পিঁয়াজ ২-৫ কেজি ৩০ টাকা দরে। এ ছাড়া ছোলা ২ কেজি এবং খেজুর দেওয়া হবে ১ কেজি করে। খেজুর ও ছোলা দেওযা হবে রোজা শুরুর পর।

 

সার্বিক বিষয়ে টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান সময়ের আলোকে বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে সংযুক্ত করে আমরা রোববার থেকে ঢাকায় ১২৫টি স্পটে পণ্য বিক্রি শুরু করেছি। জেলা পর্যায়ে পণ্য পাঠানো শুরু হয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আগামী ১৫ মার্চ থেকে সারা দেশে বিক্রি শুরু হবে টিসিবির পণ্য। ঢাকায় আমরা ওয়ার্ড কমিশনারদের সহযোগিতা নিয়ে পণ্য বিক্রি করছি। এবার পণ্য বিক্রির সময় আমরা পুলিশি সাপোর্ট চেয়েছি ডিএমপির কাছে। যদিও প্রথম দিন থেকে আমরা পুলিশ পাইনি, তবে আশা করছি আমরা এবার পুলিশি সাপোর্ট পাব।

গতকাল রোববার ঢাকার বেশ কয়েকটি স্পট ঘুরে দেখা গেছে, টিসিবির প্রতিটি ট্রাকের পেছনে শত শত মানুষের দীর্ঘ লাইন, প্রচণ্ড গরম ও কাঠফাটা রোদে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে তবেই অনেকে নিতে পেরেছেন পণ্য। আবার কয়েকটি স্থানে দেখা গেছে, পণ্য ফুরিয়ে যাওয়ার পরও মানুষের লম্বা লাইন ছিল, ফলে তাদের দীর্ঘ অপেক্ষার পরও পণ্য না নিয়েই ঘরে ফিরতে হয়েছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে ডিলাররা ক্রেতার হাতের আঙুলে অমোচনীয় কালি দিয়ে দিচ্ছেন, যাতে একই ব্যক্তি আবার পণ্য নিতে না পারে।

রোববার দুপুর ১টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ১১ নম্বর রোডের মাথায় গিয়ে দেখা যায়, টিসিবির ট্রাকের সামনে নারী ও পুরুষের দুই লাইনই বেশ দীর্ঘ। দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে পণ্য না পাওয়ার উৎকণ্ঠায় বিশৃঙ্খলাও দেখা দিচ্ছিল লাইনে। তখন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ক্রেতাদের হাতে অমোচনীয় কালিতে ক্রমিক নম্বর বসিয়ে দিচ্ছিলেন ডিলারের কর্মী।

সেখানে টিসিবির ডিলার প্রতিষ্ঠানের বিক্রেতা কবীর হোসেন বলেন, ভোক্তারাই ঝামেলা তৈরি করে ফেলছে। শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কোনো পুলিশ রাখা হয়নি। আমরা সিরিয়াল লিখে দিয়েছিলাম; কিন্তু সেই সিরিয়ালও মানাতেও কষ্ট হচ্ছিল ডিলারের। আবার সিরিয়ালের বাইরেও একদল এসে তৃতীয় লাইন তৈরি করে ট্রাকের কাছাকাছি চলে এলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই পর্যায়ে বেচাকেনা বন্ধ করে দেন বিক্রেতা, আবার ব্যস্ত হন লাইন ঠিক রাখতে।

 

লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজন নারী অভিযোগ করেন, রোদের মধ্যে প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে লাইনে থেকেও তারা ট্রাকের কাছাকাছি যেতে পারছেন না লাইনের সামনের দিকে জটলার জন্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইন দিন দিনই দীর্ঘ হচ্ছে।

মাঝে আট দিন বিরতির পর রোববার আবার ভর্তুকি মূল্যের পণ্য নিয়ে টিসিবির ট্রাক ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থানে পণ্য বিক্রি করতে নামে। ট্রাকের সামনে দাঁড়ানো রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম হয়েছে, তাতে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে কিনতে পারলে অনেকগুলো টাকা বাঁচে। সেজন্যই সকাল থেকে কষ্ট করে অপেক্ষায় আছি কিছু পণ্য কেনার জন্য। কিন্তু যেভাবে সিরিয়াল ভেঙে অনেকে পণ্য নিয়ে নিচ্ছে, তাতে দুই ঘণ্টার অপেক্ষাটাই ব্যর্থ হবে বলে মনে হচ্ছে।

এখন বাজারে ২ কেজি চিনি ১৭০ টাকা, পাঁচ কেজি পেঁয়াজ ২৭৫ টাকা, প্রতি লিটার ১৮০ টাকা দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল ৩৬০ টাকা এবং দুই কেজি মসুর ডাল ২০০ টাকা। টিসিবি প্রতি ক্রেতার জন্য ১১০ টাকা লিটার দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ দুই কেজি চিনি, ৩০ টাকা কেজি দরে ২ থেকে সর্বোচ্চ ৫ কেজি পেঁয়াজ এবং ৬৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ দুই কেজি মসুর ডাল বিক্রি করছে। ফলে টিসিবি থেকে একবার কেনাকাটা করতে পারলে প্রায় ৪০০ টাকা সাশ্রয় করতে পারছেন ক্রেতারা।

সে কারণেই ভিড়ও বাড়ছে। তবে অনেকে শুধু তেল কিনতে চাইলেও তাদের অন্য পণ্য কিনতেও বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। সে কারণে কম টাকা নিয়ে আসা অনেককে কাক্সিক্ষত পণ্য কিনতে না পেরে ফিরতে হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ের সামনের সরু গলিতে টিসিবির যে ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রি হচ্ছিল, সেই ট্রাকের ডিলারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আসে। বেলা ১১টার দিকে ট্রাকটি থামার পরপরই পাশের মনিপুর স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের নিয়ে আসা অভিভাবকরাও দাঁড়িয়ে পড়েন পণ্য কেনার সারিতে। তবে রাস্তাটি সরু হওয়ায় সেখানে অস্বস্তিকর যানজটের সৃষ্টি হয়। এখানে অপেক্ষমাণ শত শত মানুষকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখার জন্য ছিল না কোনো উদ্যোগ।

 

ফলে অনেকেই দুই ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য কিনতে পারেননি। আবার কেউ কেউ অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে একাধিকবার পণ্য কিনেছেন বলে অভিযোগ করেন লাইনে দাঁড়ানো অনেকে। যে ডিলার এই ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছিলেন, অঙ্গনা ট্রেডার্সের কর্তাব্যক্তিদের কাছে এসব অভিযোগের বিষয়ে বারবার জানতে চেয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

এদিকে বাজারে সয়াবিন তেলের সঙ্কট। যদি কোথাও বা মেলে, তাহলে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। ফলে সাশ্রয়ী দামে তেল নিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের পেছনে ছুটছে মানুষ। এখন সেই লাইন আগের থেকে হয়েছে দীর্ঘ। পণ্য পেতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

কল্যাণপুর পোড়া বস্তি এলাকায় টিসিবির ট্রাক আসার আগে থেকেই কয়েকশ লোক অপেক্ষা করছিল। ফলে ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় দীর্ঘ লাইন। তাদের মধ্যে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক হয়ে সিরিয়াল তৈরি করেন। সিরিয়াল তৈরির শুরুতে সংখ্যা দাঁড়ায় দেড়শর বেশি। এরপর কিছু সময় যেতেই সেখানে তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত হয়। অথচ বরাদ্দের তেল দেওয়া সম্ভব সর্বোচ্চ আড়াইশজনকে। ডিলার নিযুক্ত বিক্রয়কর্মী আনোয়ার হোসেন বলেন, তেল ৫০০ লিটার বরাদ্দ পেয়েছি। অর্থাৎ মাথাপিছু দুই লিটার হিসেবে আড়াইশ মানুষ পাবে। সেখানে মানুষ রয়েছে দ্বিগুণের বেশি। এ ট্রাকসেলে আড়াইশ মানুষের কাছে পণ্য বিক্রি দুই ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়; কিন্তু তখনও শতাধিক মানুষ লাইনে পণ্যের জন্য অপেক্ষা করছিল।

ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর মর্জিনা বেগম বলেন, রোদে দাঁড়িয়ে আছি। এখন শুনছি তেল শেষ। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে খালি হাতে যাব। সকাল থেকে কোনো কাজই করতে পারলাম না এ টিসিবির আশায়। এদিকে মধ্য বাড্ডা প্রাইমারি স্কুলের সামনে টিসিবির ট্রাক আসে দুপুর ১২টার দিকে। দেরি করে ট্রাক আসায় সেখানে লাইনের জন্য হুড়াহুড়ি পড়ে যায়।

 

টিসিবি জানিয়েছে, পবিত্র রমজান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এক কোটি নিম্নআয়ের পরিবারকে দুবার করে সুলভ মূল্যে পণ্য দেবে টিসিবি। চলতি বছরের নবম দফায় টিসিবির এ কার্যক্রম ৬ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২৪ মার্চ পর্যন্ত চলবে। পরে ২৭ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ফের পণ্য বিক্রি করা হবে দশম দফায়। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন বিক্রি করা হবে টিসিবির পণ্য। ঢাকা ছাড়া অন্য সব মহানগর, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উপকারভোগী পরিবারের মধ্যে বিক্রি কার্যক্রম ১৫ মার্চ থেকে শুরু হবে।

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2021 Anushondhan News
Developed by Host for Domain