নিউজ ডেস্ক :: নাটোরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি চাপায় নিহত সাংবাদিক সোহেল আহমেদ জীবন ছিল তার পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্ত্রী জনি বেগম। একদিনে স্বামী হারানোর শোক, অন্যদিকে কীভাবে সংসার চালাবেন সেই ভাবনায় দিন কাটছে তার। পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে বাঁচতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
সোমবার (৯ মে) সকালে নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ির নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন সোহেল আহমেদ জীবন (৩৩)। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
জনি বেগম জানান, তার শ্বশুর আবদুল জলিল বিশ বছর আগে মারা গেছেন এবং তার বাবা প্রায় ছয় বছর আগে মারা যান। বৃদ্ধ শাশুড়িসহ পাঁচজনের সংসারে তার স্বামী সোহেল আহমেদই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বড় ছেলে সিয়াম হোসেন (১০) সিংড়া হামিদিয়া ইসলামিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে আর ছোট মেয়ে সামিয়া খাতুন (৪) প্রাক্-প্রাথমিকে পড়ে। তার স্বামী সিংড়ার শেরকোল আগপাড়া বন্দর উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। এ ছাড়া বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দুরন্ত সংবাদ পত্রিকার সিংড়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। এখন তার স্বামী অবর্তমানে সংসারের হাল তাকেই ধরতে হবে।
জনি বেগম আরও জানান, তিনি ২০২১ সালে সিংড়া কৃষি ডিপ্লোমা থেকে কম্পিউটার বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এর আগে দমদমা স্কুল ও কলেজ থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি (মানবিক বিভাগ) পাশ করেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর মাঝে তার দুই বছর ড্রপ আউট হয়। স্বামী মারা যাওয়ায় দুই শিশু সন্তান এবং বৃদ্ধ শাশুড়িসহ পাঁচজনের সংসারের খরচ চালাতে তিনি ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তাই সরকারের কাছে তার আকুল আবেদন একটা কর্মসংস্থানের।
নিহতের ছোট ভাই কাউসার আহমেদ জানান, তারা পাঁচ ভাই, সবাই আলাদা থাকেন। দ্বিতীয় ছিল সোহেল আহমেদ। তার ছোট যে কম্পিটারের দোকান রয়েছে। সেটি এখন কাউসার দেখছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার ভাইয়ের পরিবারকে দেখভাল করা হবে। এছাড়া লাশ কাটা-ছেঁড়া না করা হবে ভেবেই তারা কোনো আইনগত ঝামেলাতে যাননি।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সোহেল আহমেদে জীবনের লাশ তার বালুয়া বাসুয়ার বাড়িতে নেওয়া হয়। বাবার লাশ থেকে কিছুটা দূরে সিয়াম ও সামিয়া ফুফুর কোলে বসে ছিল নির্বাক দৃষ্টিতে। স্বামী হারানোর শোকের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ঘিরে ছিল জনি বেগমকে। পরে নিহত সোহেলের জানাজা শেষে বাদ এশা তাকে দাফন করা হয়।
এদিকে নলডাঙ্গার ইউএনওর গাড়িচাপায় সাংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে নাটোর জেলা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা খাতুনকে প্রধান করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- নাটোরের বিআরটিএর সহকারী পরিচালক রাশেদুজ্জামান ও সিংড়ার ইউএনও এম.এম সামিরুল ইসলাম। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, সিংড়া সেখানে কেন সরকারি গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, গাড়ির চালক কে ছিলেন, তিনি বেপরোয়া গতিতে চলাচ্ছিল কি না, এসব দেখা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে তিনি জানান, দুই দিনের ছুটিতে থাকায় তিনি ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি । তবে সেখানে অন্য অফিসারদের পাঠানো হয়েছিল। তিনি এসে নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন এবং তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।