অনুসন্ধান নিউজ :: স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত সিলেট। বন্যায় সব হারিয়ে নিঃস্ব মানুষজনের হাহাকার সবখানে। এরইমধ্যে শনিবার উদ্বোধন হলো বাঙালির সক্ষমতার প্রতীক পদ্মসেতু। এনিয়ে আজ পুরো দেশই আজ উৎসবমুখর। নিজেদের দুর্দিন ভুলে আজ এই উৎসবে শামিল হয়েছে সিলেটও।
বন্যাকবলিত সিলেট অঞ্চলে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কোনো অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর ২২ জুন সিলেটের জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে এক সভায় বন্যা পরিস্থিতিতে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে সিলেট অঞ্চলে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
তবু উৎসবের এই উপলক্ষ্য থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখেনি সিলেট। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নগরের বিভিন্ন স্থানে পদ্মাসেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বড় পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ এই অনুষ্ঠান দেখতে জড়ো হন। এছাড়া জেলা ও মহানগর পুলিশের উদ্যোগে এ উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রাও বের করা হয়।
দুর্দিনেও জাতীয় এ উৎসবে শামিল হওয়া নিয়ে লেখক ও গবেষক হাসান মোরশেদ ফেসবুকে লেখেন-
‘এ সত্য এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। দুর্যোগ দুর্বিপাকে চারপাশ যখন গাঢ় অন্ধকার তখন উৎসবের রোশনাই অসহ্য পীড়াদায়ক। উচ্ছ্বাসের যতো যুক্তিই থাকুক তবু উৎসবে সে প্রাণ মিলতে পারে না, যে প্রাণ দুর্যোগে মৃয়মান।
তবু এও সত্য দুর্যোগে কেউ একা নয়। সিলেট, সিলেটের মানুষের দুর্যোগে সারা দেশের মানুষ অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন দেশের একটা বড় অংশের মানুষের জন্য যথার্থই আনন্দের। দেশের অন্য অংশের মানুষ যদি সিলেটের দুর্যোগে সহমর্মী হতে পারেন, তাহলে সিলেটের মানুষ কেনো অন্য অংশের মানুষের আনন্দে খুশী হবে না?
এ ছাড়া সিলেট শহরের বর্তমান নাগরিকদের একটা বড় অংশই এখন আর আদি সিলেটী না। এখানে জোরালো ময়মনসিংহ সমিতি আছে, নোয়াখালি সমিতি আছে, বরিশাল সমিতি আছে, খুলনা সমিতিও আছে। সিলেটে থাকা দক্ষিণবঙ্গের মানুষদের জন্য তো নিঃসন্দেহে আনন্দেরক্ষণ।
সিলেটি- ইজম থেকেও যদি চিন্তা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর এই পদ্মা সেতু বিনির্মানে যে দুজন মানুষের অবস্থান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তারাও সিলেটি। একজন সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত আরেকজন ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। সিলেটের বালু পাথরও বিপুল পরিমানে ব্যবহৃত হয়েছে এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে।
বৃহত্তর সিলেট ভালো নেই। সিলেট কাঁদছে। কিন্তু সিলেট ঘুরে দাঁড়াবে। মোগল আমলে সুবে বাংলার সবচেয়ে রাজস্ব প্রদানকারী জিলা সিলেট, আর্থিক ও কুটনৈতিক সংকটে বঙ্গবন্ধুর আস্থার স্থান সিলেট – আবার শ্রী’র হাট হয়ে উঠবে। ভাঙা বুকের পাঁজর দিয়ে নয়া বাংলা গড়ার প্রতিটি উদ্যমে সিলেট অগ্রগামী ছিলো, থাকবে।
তাই চোখের জল মুছেও সিলেট হাসবে বাংলাদেশের এই মাহেন্দ্রক্ষনে।
বাংলার জয় হোক, বাংলার মানুষের কল্যান হোক।’
শনিবার সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বড় পর্দায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদ্মাসেতুর উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশ সরাসরি দেখানো হয়। এ সময় সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, পুলিশের সিলেট রেঞ্জ ডিআিইজি মফিজুর রহমান, সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বেলুন উড়ান অতিথিরা। পরে জেলা ও মগানগরের পুলিশের উদ্যোগে আনন্দ র্যালি বের করা হয়।
মহানগর পুলিশের উদ্যোগে পুলিশ লাইন্সে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হয়। এসময় সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো নিশারুল আরিফসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সক্ষমতা ও মর্যাদার প্রতীক। আজ বংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। সীমিত পরিসরে এই ইতিহাস ও গৌরবের সাক্ষী হতে পুলিশের পক্ষ থেকে সীমিত আয়োজন করা হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, পদ্মাসেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আতশবাজিসহ বর্ণাঢ্য উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিলো। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতির কারণে তা বাতিল করা হয়েছে। আজ সীমিত পরিসরে আমরা এই উৎসবে শরিক হয়েছি।