শিরোনাম :
সিলেট থেকে পায়ে হেঁটে হজ করতে যাত্রা শুরু করল ফয়সল আহমদ সাগর কাউন্সিলর আজাদের বাসভবনে হামলা, সিসিক মেয়র ও কাউন্সিলরদের নিন্দা কাউন্সিলর আজাদুর রহমানের বাসায় হামলা : দুর্বৃত্তদের খুঁজছে পুলিশ খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায়-নগরীর ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যাগে দোয়া মাহফিল খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায়-নগরীর ৮,৯ ও ৩৭নং ওয়ার্ড বিএনপির যৌথ উদ্যাগে দোয়া মাহফিল সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক আন্তর্জাতিক নির্যাতন বিরোদী দিবস উপলক্ষে বিএমবিএফ এর আলোচনা সভা সিলেটে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বৃক্ষরোপণ সিলেটে বন্যার পানি নামছে ধীরে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সিলেট ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল

সিলেটে বন্যায় হারিয়ে গেছে ঈদ আনন্দ!

রিপোর্টার নামঃ
  • রবিবার, ১০ জুলাই, ২০২২
  • ১১১ বার পড়া হয়েছে

অনুসন্ধান নিউজ :: ‘ঈদের সময়। আতো (হাতে) টাকা নেই। ফুয়া-পুড়ি (ছেলে-মেয়ে) নতুন কাপড়ের জন্য কান্নাকাটি করেছে। বাধ্য হয়ে কাননগো বাজারের ফুটপাত থাকি ৪০ টাকা দিয়া তারারে পুরান (পুরাতন) কাপড় কিনিয়া দিছি (কিনে দিয়েছি)। আমরা স্বামী-স্ত্রী পুরান কাপড়েই ঈদ করমু। বেপানায় (বিপদে) পড়িয়া আশ্রয় কেন্দ্রে আইছি। পানিতে বাড়ি-ঘর ভাসাইয়া (ভাসিয়ে) লইয়া গেছে। মাইনষে (মানুষে) বাড়িত ঈদ করের (করছে) আর আমরা এই স্কুলে আছি কোনোমতে। বাড়ি ছাড়া ঈদ করলে তো মনে শান্তি মিলে না। এর মাঝে টানাটানি তো আছেই। এর লাগি ঈদ কী জিনিস ইবার আমরা কেউ বুঝিয়ার না।’

কথাগুলো বলছিলেন হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মো. রাজু মিয়া। শনিবার বিকেল ৬টায় কথা হয় তার সাথে।

রাজু মিয়ার বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের হাকালুকি হাওর পারের মুর্শিবাদকুরা গ্রামে।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে তিনি মাছের ব্যবসা করতেন। মাছ বিক্রির আয়েই স্বচ্ছলভাবেই চলত তার সংসার। গত ১৭ জুন আকস্মিক বন্যায় তার ঘরে কোমর সমান পানি হয়। বানের পানিতে ভেঙে গেছে সেই ঘর। তাই আশ্রয় নেন বাড়ির অদূরের হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে। গত ২৪ দিন ধরেই স্ত্রী-সন্তানসহ আছেন এখানে। আশপাশের বাজারগুলো পানি ওঠায় তিনি এখন বেকার। এই কদিনে সংসার চালাতে জমানো টাকা ও শেষ সম্বল নিজের হাঁস-মুরগি ও ছাগল বিক্রি করেছেন। এখনও তার হাতে টাকা নেই।

রাত পেরুলেই ঈদুল আযহা। তবে রাজু মিয়ার মতো বন্যাকবলিত মানুষদের এবার ঈদের আনন্দ যেন স্পর্শ করতে পারছে না। অনেকটাই ম্লান তাদের ঈদ উৎসব। বিশেষ করে বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের মনে ঈদ উৎসবের কোনো আমেজ নেই।

রাজু মিয়ার তার প্রতিবেশী নেহারুন বেগমও আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমরার পরিবারে ৯ সদস্য। আশ্রয় কেন্দ্রে আইছলাম শান্তির লাগি। ঘরে কোমর পানি। আফালে সবতা ভাঙিয়া নিছে গি। ইখানো আইয়া মনে অর আমরা অপরাধ করছি। একদিন ইউএনও সাহেব হুখনা (শুকনো) খাবার ও একদিন মন্ত্রী চাউল-ডাইল অতা দিছন কিছু। আর দুই তিন-দিন খিচুড়ি আর পোলাও পাইছি। ইতায় তো পেট ভরে না। আইজ প্রায় ১ মাসের কাছাকাছি অইযার। ছেলের রুজি নাই। মানইষের কাছে হাত পাতিয়ার।’

‘‘বাইরা থাকি কেউ ত্রাণ লইয়া আইলে মেম্বার-চেয়ারম্যানে আশ্রয় কেন্দ্রে দিতে দেই না। আমরা কি কষ্টে আছি এটা আল্লাহ দেখরা। একবার খাইতে পারলে আরেকবার খাইতে পারিয়ার না। এই কষ্টটা কইয়া বুঝানি যাইতো নায়। ঈদের একটা সময় কেউ আমরার খোঁজ নিছে না। নাতি-নাতিন লইয়া কষ্ট করি চলা লাগব। কষ্টের মাঝে বাড়ির বাইরা কিওর (কিসের) ঈদ। ঘরে ঠিকমতো চাউল-খরচপাতিউ কিছুই নাই।’’

হাওর পাড়ের একই গ্রামের তাজুল ইসলাম। হাঁস-মুরগি বিক্রির আয়ে চলত তার সংসার। বাজার-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় এখন বেকার তিনি। ঈদের দিন কীভাবে কাটাবেন জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, ‘২৪ দিন ধরে আছি আশ্রয় কেন্দ্রে। কাম কাজ নাই। আশ্রয় কেন্দ্রে আইয়া আমরা যেন অপরাধ করছি। সরকারি হুখনা (শুকনো) খাবার ও একদিন মন্ত্রী চাউল-ডাউল অতা দুইদিন পাইছি।’

‘‘আর যদি সরকারিভাবে আমরার কেউ খোঁজ নিছে প্রমাণ দিতে পারেন। আমরার যে শাস্তি হবে আমরা মেনে নেব। আমরা অসহায় হওয়ায়ই আশ্রয়কেন্দ্রে আইছি। কোনো খরচ নাই ঘরে। হাতে টাকাও নাই। পুরান কাপড়, নিজের ঘর ছাড়া স্কুলে আছি। ঈদ কিলা কাটব ইতা আপনারাই বুঝইন।’’

বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় ও হাকালুকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩টি ভবন রয়েছে। এখানে প্রায় ৫০টি পরিবার ২৪ দিন ধরে আশ্রয়ে আছেন। এখানকার প্রায় ৪৫টি পরিবার মুসলমান সম্প্রদায়ের।

তাদের ভাষ্যমতে, এবারের ঈদুল আযহায় তাদের কোনো আয়োজন নেই। অন্য বছরগুলোতে সাধ্যমতো তারা কেনাকাটা করেন। ঈদে সবাই মিলে আনন্দ করতেন। কিন্তু এবার তাদের মনে কোনো আনন্দ নেই।

এই আশ্রয় কেন্দ্রটির মতো বড়লেখায় ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৪১টিতে এখনও মানুষ রয়েছেন। আশ্রয় নেওয়া সবারই একই অবস্থা। এছাড়া হাকালুকি হাওর পারের বন্যার্ত মানুষের মনেও নেই ঈদের আনন্দ।

হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রের আরেক বাসিন্দা আপ্তাব উদ্দিন বলেন, ‘ঈদে বাচ্চাদের কিছু কিনে দিতে পারিনি। ভাসিয়া আইছি। পুরান কাপড়ে ঈদ করিয়ার। পুরান কাপড়ে ঈদের আনন্দ পাওয়া যায় না।’

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, ‘৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৪০টির মতো আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আছেন। অন্যগুলোয় যারা ছিলেন, তাদের অনেকের বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। তাই তারা বাড়িতে চলে গেছেন। জেলা প্রশাসন থেকে একটা গরু দেওয়া হয়েছে। ঈদের দিন রান্না করে আশ্রয়কেন্দ্রের বন্যার্ত মানুষকে খাওয়ানো হবে। বন্যার পানিতে যারা আটকে থেকে কোরবানি করতে পারতেছে না; যতটুকু পারা যায় তাদেরও দেওয়া হবে। তাছাড়া ৪০০ প্যাকেট খাদ্যদ্রব্য ঈদ উপহার হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্রে বিতরণ করা হচ্ছে। শনিবার কিছু বিতরণ করা হয়েছে। ঈদেরদিন বাকিগুলো বিতরণ হবে।’

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2021 Anushondhan News
Developed by Host for Domain