অনুসন্ধান নিউজ :: টানা ১৯ দিন চলা আন্দোলনের পর কাজে ফিরেছেন সিলেট অঞ্চলের চা শ্রমিকরা। রোববার (২৮ আগস্ট) সিলেটের অধিকাংশ বাগান বন্ধ থাকলেও বেশ কয়েকটি বাগানের চা শ্রমিকদের কাজে ফিরতে দেখা গেছে।
এদিন সকালে কাজে ফেরা শ্রমিকরা বাগানের অভ্যন্তরে দলে দলে আনন্দ মিছিল সহকারে কাজে যোগ দেন। এদিকে টানা ১৯ দিন পর চা শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে ফিরে কাজ করতে পারায় প্রত্যেকের চোখে-মুখে আনন্দের অনুভূতি লক্ষ্য করা গেছে।
সকালে সিলেট নগরের মালনিছড়া চা বাগান ও দলদলি চা বাগান ঘুরে দেখা গিয়েছে এমন চিত্র। পাশাপাশি চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সাধারণ শ্রমিকসহ আন্দোলনের নেতারা।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, ‘চা বাগানে অচলাবস্থার অবসান ঘটেছে। সকাল থেকে বেশ কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে কিছু বাগানে আজ সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আজ কাজে যাচ্ছেন না তারা, সে সকল বাগানের শ্রমিকরা আগামীকাল সোমবার থেকে কাজে যোগ দেবেন। এছাড়া সকাল থেকে কিছু শ্রমিক দলে দলে আনন্দ র্যালি করে কাজে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’
বাংলাদেশ শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘মজুরি ১৭০ টাকা প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মেনে নিয়েছি। তবে শ্রম আইনের সংশোধন ও জমিজমা সংক্রান্ত আরও বেশ কিছু দাবিদাওয়া বাস্তবায়ন চাই আমরা।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চা শ্রমিকরা চেয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখের দিকে। তিনি মজুরি ঘোষণা করেছেন শ্রমিকরা মেনে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মানসম্মত মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছেন এ জন্য তাঁর প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ।’
প্রসঙ্গত, গত ৮ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হয় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে গত সোমবার (২২ আগস্ট) দুপুরে শ্রমিকদের একাংশ আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরে। আরেক অংশ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন। এদিকে চা শ্রমিকদের টানা ধর্মঘটে সারাদেশের বাগান থেকে চা-পাতা উত্তোলন, কারখানায় প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদন বন্ধ থাকে। এতে স্থবির হয়ে পড়ে দেশের চা শিল্প।
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর পাশাপাশি আনুপাতিক হারে তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে দৈনিক মজুরি হবে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
শনিবার বিকালে গণভবনে চা শ্রমিকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা বাগান মালিকপক্ষের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের রবিবার থেকে কাজে ফেরার আহ্বান জানান।
পরে সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, সব আলোচনার পর যেটি হয়েছে-সেটি হলো শ্রমিকদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করে দিয়েছেন ১৭০ টাকা। চা বাগান মালিকপক্ষের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহ আলম। এরপরে কাজে ফেরার আশ্বাস দেন চা-শ্রমিকরা।