অনুসন্ধান নিউজ :: সিলেট বিভাগে সুস্থ ধারার বাউল গান ও বাউল গানের নামে সকল অপকর্ম বন্ধের দাবিতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোঃ মজিবর রহমান এর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাউল শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট সিলেটের নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগে সুস্থ ধারার বাউল গান প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলনকারী বাউল শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফকির শাহ তোফাজ্জুল ভান্ডারী, সাধারণ সম্পাদক ছয়ফুল আলম জালালী, বাংলাদেশ বাউল কল্যাণ ফেডারেশনের মহাসচিব বাউল শিল্পী দিলাল উদ্দিন সরকার, বাউল শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের সাংগঠনিক সম্পাদক বাউল শিল্পী ভাসানী বারিক, বাংলাদেশ জাতীয় বাউল ফাউন্ডেশনের সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী গীতিকার ফিরুজ আহমদ ফিরুজ, বাউল শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট সিলেটের মৌলভী বাজার রাজনগর উপজেলার দায়িত্বশীল বাউল শিল্পী জালালী পারভেজ, বাউল শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট সিলেট এর সদস্য আব্দুর রব, রুবেল আহমদ, কণ্ঠশিল্পী জালালী শামীমা, শাহ তোফাজ্জুল ভান্ডারীর সংগীত একাডেমীর সাধারণ সম্পাগক বাউল মীর আজাদ, সদস্য বাউল ইসমাইল প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সিলেট বিভাগে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী বাউল গান আজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। হযরত শাহজালাল হযরত শাহ পরন (রহ:) এর পুণ্যভূমি এই সিলেট বিভাগে শত শত মরমী সাধক জন্ম নিয়েছেন। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বাউল গান ভক্ত আশেকান রাতের পর রাত ঘুম নিন্দ্রা হারাম করে উপভোগ করতেন। আজ সেই বাউল গান ও বাউল গানের আসর যাত্রা গানের মঞ্চে রুপ ধারন করেছে।
সিলেট বিভাগের প্রত্যেক মাজার মঞ্জিলে বিভিন্ন স্থানে বাউল গানের আসর এবং স্টেইজ সাজিয়ে কিছু নারীবাজ নেশাখুর এক তরফা ৮/৯টি যুবতি মেয়ে এনে অশ্লিল নৃত্য ও যাত্রার মেয়েদের মত নাচানাচি করে থাকে। যা দেখে যুব সমাজ এবং তরিকাপন্থি লোক বিপদগামী হচ্ছে। বাউল গানের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে। যারা এসব করছে তারা ২০/২৫ জন যুবক মিলে সিলেটের বিভিন্ন পীর ফকির অলি আউলিয়ার মাজার শরীফকে পুঁজি করে নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানিয়ে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত সাউন্ড মাইক ব্যবহার করে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ার বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এসব আয়োজকরা বেশির ভাগ নেশাখুর জোয়াড়ী নারীখুর লোক। বাউল গানের আসর সাজিয়ে ৮/৯ টি সুন্দরী যুবতি মেয়ে এনে প্রত্যেক মেয়ে শিল্পীদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে। গানের আসর শেষে টাকাওয়ালা লোকেদের কাছে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে দেহ ভোগ করার সুযোগ করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অপকর্ম অশ্লিলতা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে হচ্ছে।
সুন্দরী মেয়েদের আসা যাওয়ার জন্য একটি দালাল চক্র রয়েছে। দালালদের দিয়ে টাকা ওয়ালা নেশাখুর জোয়াড়ীদের দিয়ে দেহ ভোগের সুব্যবস্থা করে দেওয়া হয় বলে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মাজার মঞ্জিলে গানের আসরে মারামারিও হওয়ার মত অনেক ঘটনা ঘটেছে। মামলা পর্যন্ত হয়েছে। এমন কোন মাজার নেই যে এই দালাল চক্রের হাত নেই। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার কিছু কিছু মাজারের খাদেম কে ৫/১০ হাজার টাকার বিনিময়ে মেনেজ করে বাউল গানের আসর সাজায়। প্রত্যেকটি আসরে শুধু যুবতী মেয়ে উপস্থিত থাকে। একটি গানের আসরে আমাদের পুরুষ বাউল শিল্পী রাখা হয়নি। বাউল গানের আসরে পুরুষ বাউল শিল্পীদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। ইদানিং সিলেট শহরের আনাচে কানাচে কিছু কিছু অসাধু লোক গানের নামে একটি রুম ভাড়া নিয়ে প্রতিরাত গানের আসর জমিয়ে যারা গান পরিবেশন করতে আসে প্রত্যেক শিল্পীদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা আদায় করে থাকে বলে অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। সরজমিনে তদন্ত করলে বিষয়টি প্রমাণ পাওয়া যাবে।
শাহ পরান থানা, এয়ারপোর্ট থানার এবং শহরের ভিতরে আরও দুই তিনটি স্থানে প্রতি রাত্রে গানের আসর জমিয়ে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছে। সিলেট বিভাগের প্রত্যেক স্থান থেকে বিশেষ করে বাউল গান, ভক্তিমুলক গানের নামে ব্যানার টাংগিয়ে যাত্রার মঞ্চ গুলোসহ সব ধরনের অপকর্ম অশ্লিলতা দূর করতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সুস্থ ধারার বাউল গান হোক। বাউল গানের আসরে পুরুষ বাউল শিল্পীরা স্থান যেনো পায়। পুরুষ বাউল শিল্পীরা আজ অসহায়, তাদের একটি গানের বায়না নেই। বাউল গানে আজ সুন্দরী যুবতি মেয়েরা দখল করেছে। বাউল গান ও মাজার মঞ্জিলের পবিত্রতা ধ্বংস করেছে এসব আয়োজক কমিটি। সিলেট বিভাগ থেকে সকল অপসংস্কৃতি বন্ধ হোক এবং সুস্থ ধারার বাউল গান ও পুরুষ বাউল শিল্পীরা যেনো বাউল গানের আসরে উপস্থিতি থাকে সেই ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে জোর দাবি জানান।
সিলেট শহরে সহ সিলেট বিভাগের প্রত্যেক মাজার মঞ্জিলে বাউল গানের নামে সকল অপকর্ম বন্ধসহ বাউল গানের দালালদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাউল নেতৃবৃন্দ। বিজ্ঞপ্তি