অনুসন্ধান নিউজ :: পরিবারে ১১জন মানুষ। মা-বাবা, বড়ভাই-ভাবী, স্ত্রী সন্তান নিয়ে টিনশেডের বাড়িতে কোনো রকমে চলছিলো আমাদের। প্রতিদিনের মতো গত রাতেও খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়েছিলাম। রাত ১২টার দিকে বৃষ্টি আসে, সাথে প্রচণ্ড গতিতে ঝড়ো হাওয়া। ৫ মিনিটেই সব শেষ। চালের টিন পার্শ্ববর্তী গ্রাম শ্রীনাতপুরে বৈদ্যুতিক খুঁটির উপরে পাওয়া গেছে। পোশাক-পরিচ্ছেদ কোথায় উড়িয়ে নিয়ে গেছে তা আর পাওয়া যায় নি। কাঁথা-কম্বল পাওয়া যাচ্ছে পাশের নদীতে। আমার প্রায় ৩লক্ষ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। আমার আর কিছুই রইলো না। বড় বড় গাছ উপড়ে দিয়েছে। শুধু আমার নয়, আমাদের গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী গ্রাম শ্রীনাতপুর, দরগাপুর গ্রামেরও ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।
আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার আসামমুড়া গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক হাফিজ আহমেদ শফি।
সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে প্রচণ্ড ঘুর্ণিঝড়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের দরগাপুর, আসামমুড়া ও শ্রীনাতপুর গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে গিয়েছে। এতে আসামমুড়া গ্রামের শিক্ষক হাফিজ আহমেদ শফি ছাড়াও দরগাপুর গ্রামের আবদুর রহমান, আবদুল হেকিম খান, ইকবাল খান, কবির খান, নিজাম উদ্দিন, সেলিম পাঠান, মুসলিম পাঠান, আবদুল মজিদ, আবদুল জাহির, আবদুল হাদী, তালহা খান, বাবলু মিয়া, আলিফ পাঠান, আবদুল পাঠান, হাবিবুর পাঠান, সাঈদ পাঠান ও আজিদুল পাঠানসহ তিন গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক বসতঘর, খড়েরঘর ও গোয়ালঘর ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যায়। এতে খোলা আকাশের নিচে স্থান হয় ক্ষতির স্বীকার হওয়া শতাধিক মানুষের। এছাড়াও ঘূর্নিঝড়ে উপড়ে যায় ইউনিয়নের কয়েকশ ছোট বড় গাছ। গ্রামগুলোতে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।
দরগাপুর গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ খান জানান, আমাদের গ্রার মাঝেরহাটি, পূর্বহাটি, পশ্চিমহাটি ও জাহির মিয়ার বাড়িসহ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি ঘর ঘুর্নিঝড়ে তছনছ করে দিয়েছে। বড় বড় গাছ উপড়ে ফেলেছে। কোনো কোনো ঘরের চালের টিন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদের মধ্যে অনেকে আছেন দিনমজুর। খুবই গরিব, দরিদ্র। ঘরগুলোর মধ্যে বসতঘর ছাড়াও বেশ কয়েকটা আছে গোয়ালঘর ও খড়ের ঘর। মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুনেছি আসামমুড়া ও শ্রীনাতপুরেও অনেক ঘর ভেঙেছে।
পাথারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, সকালে খবর পেয়েই আমি ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে গিয়েছি। এখনো আছি। অনেক ক্ষতি হয়েছে। শ্রীনাতপুর-আসামমুড়ায় ১৫ থেকে ২০টি এবং দরগাপুরে প্রায় ৫০টি বসতঘর, গোয়ালঘর ও খড়ের ঘরে ক্ষতি হয়েছে। আপাতত তাদেরকে শুকনো খাবার (চাল, চিড়া ইত্যাদি) দিচ্ছি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের (পিআইও) লোকজন এসে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছেন। দেখি তারা কী দেন। আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি থাকবে না।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমাদের লোকজন ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা করেছেন। এই মুহুর্তে আমাদের হাতে কোনো কিছুই নেই। তালিকা জেলা অফিসে পাঠাবো। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো তাদেরকে সহযোগিতা করার।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ্ জামান বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদেরকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। আমরা ক্ষতির পরিমান নির্ণয় করে সে তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো। আশা করছি খুব দ্রুত তাদেরকে সহযোগিতা করতে পারবো।
এদিকে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো পরিদর্শন করছেন। দিচ্ছেন সহযোগিতার আশ্বাস। এলাকাবাসীর দাবি, শুধু আশ্বাস দিয়েই যেনো দায়ীত্ব শেষ না হয়ে যায়। যাদের ক্ষতি হয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে যেনো ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হয়