নিউজ ডেস্ক :: প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা। পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন। ৩৫ হাজার ৪৭০ জন ভোটার আগামী বুধবার (২ নভেম্বর) নির্বাচন করবেন তাদের কাঙ্ক্ষিত জনপ্রতিনিধি মেয়র, সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর।
এতদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের মন পাওয়ায় সচেষ্ট ছিলেন প্রার্থীরা। সোমবার দিবাগত রাত ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। এবার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে প্রার্থীদের। ভোটাররাও হিসেব কষছেন তাদের পছন্দের প্রার্থী নিরিখে।
পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত প্রার্থী। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ। জগ প্রতীকে তার বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমান।
বিএনপির উপজেলা সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হয়েছেন সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন। তিনি হ্যাঙার প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আরেক প্রার্থী নিউহাম বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোমিন খান মুন্না (মোবাইল ফোন)। উপজেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আহমদ (খেজুর গাছ), উপজেলা আল ইসলাহ’র সভাপতি তালুকদার ফয়জুল ইসলাম (চামচ), যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা শফিক আহমদ (নারিকেল গাছ) মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় করছেন।
সরেজমিন পৌরসভা ঘুরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে চার প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। প্রার্থীরা হলেন- মুহিবুর রহমান, ফারুক আহমদ, জালাল আহমদ ও মোমিন খান মুন্না।
ভোটারদের অনেকে জানান, মুহিবুর রহমান সাবেক দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান। ভোটের মাঠে আধিপত্য রয়েছে তার। বিশেষ করে বিশ্বনাথ পৌরসভাকে দুইভাগে বিভক্ত করা বাসিয়ার উত্তর পাড়ে ভোটের আধিপত্য বেশি মুহিবের। এ ছাড়া দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ায় তার ভোট ব্যাংক ভারী। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একটি অংশ দলের বাইরে গিয়েও এলাকা বিবেচনায় তাকে ভোট দিতে পারেন। যে কারণে তাকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে নির্বাচনী লড়াইয়ে।
ফারুক আহমদ ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হওয়ায় অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। কিন্তু দলীয় কোন্দলের কারণে তাকে অগ্রভাগে ধরা যাচ্ছে না। বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগে ফারুক আহমদ ক্লিন ইমেজধারী হলেও নেতাকর্মীর সংস্পর্শে না থাকায় নির্বাচনী মাঠে এর প্রভাব পড়তে পারে।
বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের সিলেট জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এই দুই চৌধুরীকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগে দুটি বলয় সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু ভোটের মাঠে এক চৌধুরীকে সক্রিয় থাকতে দেখা গেলেও অন্যজনকে সেভাবে দেখা যায়নি। ফলে ভোটের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটের মাঠে নামতে পারেননি। যে কারণে ভোটের মাঠে অনেকটা বেকায়দায় ফেলেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুক আহমদকে।
যদিও সিলেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেছেন, দল ঐক্যবদ্ধভাবেই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সক্রিয় রয়েছে। বিশ্বনাথ ছাড়াও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ ও গোয়াইনঘাটের ৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিভক্ত হয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। আর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও বিভিন্ন নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীর পক্ষে দিনরাত কাজ করেছেন। শেষ জনসভায়ও নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল।
ভোটারদের অভিমত, বিশ্বনাথে ৪০ শতাংশ ভোট বিএনপি ঘরানার, আওয়ামী লীগের ৩০ শতাংশ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের ১০ শতাংশ করে এবং অন্যান্য আরও ১০ শতাংশ ভোট রয়েছে।
সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপির পদত্যাগী নেতা জালাল উদ্দিনের প্রভাবও বেশ ভোটের মাঠে। জনপ্রিয়তার দিকেও এগিয়ে আছেন তিনি। কিন্তু পতদ্যাগের পরও দল থেকে বহিষ্কার হওয়া ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকায় ভোটের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এরপরও তাকে লড়াইয়ে তাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ধরে নেওয়া হচ্ছে। আর বিএনপির তরুণ প্রার্থী মোমিন খান মুন্না আর্থিক দিক থেকে স্বাবলম্বী। যে কারণে ভোটারদের টানতে পারছেন তিনি।
ভোটারদের মতে, জাতীয় পার্টির ভোট যদি আওয়ামী লীগের বাক্সে যায়, তবে নৌকার পালে হাওয়া লাগতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগের ভোটে ছেদ ফেলেছেন বিদ্রোহী মুহিবুর রহমান। আর জামায়াতের ভোট তার বাক্সেই পড়তে পারে। সেই সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আঞ্চলিকতার ছাপে বিএনপির কিছু ভোট তার বাক্সে যেতে পারে। ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে মুহিবুর রহমান দাবি করেছেন, পৌর এলাকার ৮০ ভাগ মানুষ তাকে ভোট দিতে চান। যে কারণে নির্বাচনে ইভিএম কারচুপির অভিযোগের পাশাপাশি ভোটারদের কেন্দ্রে ভোটদানে বাধা দেওয়া হতে পারে।
নবগঠিত এই পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রথম নাম লেখাতে সকল প্রার্থীরাই নিজেদের বিজয় নিয়ে আশাবাদী। এখন অপেক্ষার পালা কে হচ্ছেন বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম মেয়র? বিশ্বনাথ পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মৌলভীবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে স্থায়ী-অস্থায়ী বিশটি কেন্দ্রে ১১৮টি কক্ষে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বুধবার। নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৩৫ হাজার ৪৭০ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ২৭৯ এবং নারী ভোটার রয়েছেন ১৭ হাজার ১৯১ জন।