নিউজ ডেস্ক :: দেশে করোনাভাইরাসের টিকার চতুর্থ ডোজ হিসেবে ফাইজার-বায়োএনটেকের যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, তার মেয়াদ মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ থেকে ৭০ দিন বাড়ানোর ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আজ রোববার সকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন নিয়েই ফাইজার-বায়োএনটেক তাদের টিকার মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বাড়িয়েছে। আর বাংলাদেশের ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপস (নাইট্যাগ), জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটি ওই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। সুতরাং চতুর্থ ডোজে ওই টিকা নিতে কোনো সমস্যা নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, কোভিড সংক্রমণ মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হক, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম রোববারের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কিছু গণমাধ্যমে খবর এসেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা ব্যবহার করছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই এর ব্যাখ্যা দিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।’
পরে এ বিষয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘টিকার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ীই সব কাজ করা হয়েছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার-বায়োএনটেক মেয়াদ বাড়িয়ে চিঠি দিয়েছে। এই চিঠি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন, নিয়ম, প্রক্রিয়া মেনেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টিকা দিচ্ছে। যারা প্রক্রিয়াটা জানেন, সেসব গণমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে সঠিক নিউজ দিয়েছেন।
ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘আপনারা (গণমাধ্যম) আমাদের কাজে সব সময় সহযোগিতা করেন। আমরা আশা করি দেশের জন্য যা ভালো, সমাজের জন্য ভালো, সেগুলোকে প্রমোট করবেন। সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবার বাড়ছে। এ অবস্থায় সবাইকে টিকা দিয়ে সুরক্ষিত রাখতে হবে।’
দেশে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে করোনাভাইরাসের টিকার চতুর্থ ডোজ দেওয়া শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চতুর্থ ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকাই দেওয়া হচ্ছে। এর আগে তৃতীয় বা বুস্টার ডোজে ফাইজারের পাশাপাশি মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়েছিল।
ফাইজারের টিকার মেয়াদ বৃদ্ধি এবং নতুন ব্যবহারবিধি জানিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর সারাদেশে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে নির্দেশনা পাঠায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূরি।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ফাইজারের যে টিকার মেয়াদ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল, তা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের অনুমোদন নিয়েই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা হিমাঙ্কের নিচে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে জমাট অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। মানুষের শরীরে প্রয়োগের আগে সাধারণ রেফ্রিজারেটরে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে টিকার ভায়াল রাখা হয় ৬ ঘণ্টা। তাতে সেটা আস্তে আস্তে গলে যায়। তখন ডাইলুয়েন্টের সঙ্গে মিশিয়ে এই টিকা মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, যেসব টিকার ভায়ালে বা বক্সের গায়ে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ রয়েছে, সেসব টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে গলানোর ৭০ দিনের মধ্যে অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের মধ্যে যেটা আগে আসে, সে তারিখের মধ্যে টিকার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৪ কোটি ৯৩ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি প্রথম ডোজ, ১২ কোটি ৬৭ লাখ ১৪ হাজার দ্বিতীয় ডোজ এবং ৬ কোটি ৪৮ লাখ ৯০ হাজারের বেশি বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে।