অনুসন্ধান নিউজ :: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দীরগাঁও ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় নওয়াগাওঁ হাইলা হাওর পাড়ে ১০০টি পরিবার নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) নওয়াগাওঁ আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণ শ্রমিকদের উৎসাহী করার লক্ষে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে শ্রমিকদের ফুলের স্টিক ও একটি করে কম্বল দেয়া হয়।
দুপুর ১২ টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাব ও সিলেট ইমজা এবং গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান।
এসময় গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, “প্রাকৃতিক সম্পদের গর্ভধারিণী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা। এ উপজেলায় রয়েছে প্রকৃতি কন্যা জাফলং, জল পাথরের বিছনাকান্দি, জলপ্রপাতের পান্তুমাই, মায়াবতী ঝর্ণা, মায়াবন, হিজল-করচের দামারী, দেশসেরা জলাবন রাতারগুলসহ শতাধিক পর্যটন কেন্দ্র। পুরো উপজেলা জুড়ে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ আর একটু পরপর সবুজ ছায়াঢাকা গ্রাম। গ্রামের বাড়িগুলোর মধ্যে অধিকাংশ বাড়ির দেয়াল ও চালা ঢেউটিনের। আধাপাঁকা দু-চারটি ঘরের সঙ্গে মাটির ঘরও চোখে পড়ে মাঝেমধ্যে। এ উপজেলাধীন নন্দিরগাও ইউনিয়নের এমনি এক গ্রাম নোয়াগাও; যে গ্রামে বাস্তবায়িত হয়েছে নোয়াগাও আশ্রয়ণ প্রকল্প।”
তিনি বলেন. “মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন অর্থাৎ ‘ক’ শ্রেণীর পরিবার পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ইতোমধ্যে ৮৯৫টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে যার মধ্যে নোয়াগাও আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মিত হয়েছে ১০০টি ঘর। এছাড়াও বর্তমানে এ উপজেলায় আরোও ২০৬টি গৃহের নির্মাণ কাজ চলমান।”
এক নজরে নওয়াগাওঁ আশ্রয়ণ প্রকল্পঃ মৌজা-লামাপাড়া, জে.এল নং- ১৬৬, খতিয়ান নং- ১, দাগ নং- ৪৭, ৪৯ ও ৫০ মোট জমির পরিমান ৫.৩৬ একর (দৈর্ঘ্য ৭৩০ ফুট, প্রস্থ ৩২০ ফুট), ভরাটকৃত জমির পরিমান ৩.২৫ একর (দৈর্ঘ্য ৬৩৫ ফুট, প্রস্থ ২২৫ ফুট) উক্ত জমির চতুর্পাশে খাল খনন পূর্বক জমি ভরাট করা হয়েছে।খননকৃত খালের দৈর্ঘ্য ১৪৫০ ফুট খালের পানিধারন ক্ষমতা,৪.৮৮ মিলিয়ন গ্যালন প্রকল্পে নির্মিত গৃহ সংখ্যা ১০০টি (প্রতিটি গৃহে দুটি বেডরুম, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট রয়েছে) প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা।
গভীর নলকূপ সংখ্যা ১০ টি (সাবমার্জেবল পাম্প ও ওভারহ্যাড ট্যাংকসহ। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা,প্রতিটি গৃহে পৃথক মিটারসহ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা। সিলেট থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলাগামী পাকা সড়ক হতে প্রকল্পের সংযোগ সড়কের দূরত্ব ১.০০কিঃমিঃ যা পাকাকরণের কার্যক্রম চলমান। স্থানীয় বাজার হতে দূরত্ব ইউনিয়ন এর প্রধান বাজার ‘সালুটিকর বাজার’ থেকে দূরত্ব ৪.০০ কিঃমিঃ। শিক্ষা ব্যবস্থাঃ প্রকল্পের ১.০০ কিঃমিঃ এর মধ্যে ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও ১টি স্কুল এন্ড কলেজ রয়েছে। . নিকটবর্তী নদী হতে দূরত্ব ৩.০০ কিঃমিঃ। অন্যান্য সুযোগ সুবিধা।
প্রকল্পের ১.০০ কিঃমিঃ এর মধ্যে ১টি ৩তলা বিশিষ্ট বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র এবং একাধিক মসজিদ ও মন্দির রয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাও গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে ৫.৩৬ একর জমির চতুর্পাশে খাল খনন পূর্বক ৩.২৫ একর জমি ৬/৭ ফুট উচ্চতায় ভরাট করে প্রায় ২বছর কম্পেকশন এর পর সেই জমিতে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ভরাটকৃত এ জমিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে ১০০ টি ঘর। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন একশতটি পরিবারের প্রত্যেকে পাবেন ২শতক জমিসহ ১টি ঘর। এই ঘরের উপকারভোগীর নামের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের কেউ কেউ এখনো থাকেন অন্যের জায়গায় ঘর তুলে। অনেকে আবার বসবাস করছেন খাস জমিতে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর মাধ্যমে গৃহহীন ও ভুমিহীন পরিবারগুলো পাবে আপন ঠিকানা। নিজের জায়গায় নিজের ঘরের সামনে দাঁড়ানোর নতুন স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে তাদের মনে। অসহায় এ মানুষগুলো নিজেদের স্থায়ী ঠিকানা হচ্ছে জেনে মহাখুশি। তারা এখন নিজদের আত্মপরিচয়ে মাথা উঁচু করে নতুন জীবনে যাত্রার স্বপ্ন দেখছেন। এ প্রকল্পের কাছাকাছি স্থানে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১ম পর্যায়ে ৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছিলো। ২০২১ এর জানুয়ারি মাসে সেই ঘরগুলো পরিদর্শনে আসেন সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
পরিদর্শনের সময় কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত একটি খড়ের ঘরের পাশে নওয়াগাওঁ গ্রামের মৃত হাতিম আলীর ছেলে ইউনুস আলী (৭০) কে কান্নারত অবস্থায় মন্ত্রী চোখে পড়ে। এসময় মন্ত্রী তার সাথে কথা বলে তাকে শান্তনা দেন এবং তাকে একটি সরকারি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ সময় মন্ত্রী এ এলাকায় খাস জমি সনাক্ত করে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১০০টি ঘর নির্মাণ করার নির্দেশ দেন।
মন্ত্রী নির্দেশনার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে খাস জমি বাছাই পূর্বক মাটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয় এবং পরবর্তীতে মাটি কম্পেকশন এর পর সেই জমিতে ঘর নির্মাণ করা হয়। নওয়াগাওঁ আশ্রয়ণ প্রকল্পটিকে মডেল গ্রাম বা সাস্টেইনেবল ভিলেজ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা, ডিপটিউবওয়েল, ওভার হ্যাড ওয়াটার রিজার্ভার নির্মাণ পূর্বক ঘরে ঘরে পানি সাপ্লাই এর ব্যবস্থাসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই আশ্রয়ন প্রকল্পের ৩ পাশে খাল খনন করা হয়েছে যা এখানকার মানুষের পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী কৃষি জমি আবাদে সহায়তা করবে। এছাড়া প্রকল্পের পূর্ব পাশ দিয়ে একটি বড় খাল খননের পরিকল্পনা করা হচ্ছে যা সরাসরি পার্শ্ববর্তী নদীর সাথে সংযোগ থাকবে। খালের উৎস মুখে সোলার সেচ পাম্প বসানোরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে যাতে করে কৃষি আবাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ‘গ্রাম হবে শহর’ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই প্রকল্প একটি ভাল উদাহরণ হওয়া সম্ভব।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার ভুমি তানভীর হোসেন, গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম নজরুল ইসলাম, নন্দিরগাওঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুল, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আল আজাদ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি সাঈদ চৌধুরী টিপু, কোষাধ্যক্ষ আনন্দ সরকার, নির্বাহী সদস্য শাহীন আহমদ, রনজিৎ সিংহ, সিলেট ইমজার সভাপতি মাহবুবুর রহমান রিপন, সাধারণ সম্পাদক গুলজার আহমদ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাব সদস্য দিপু সিদ্দিকী, আবুল মাহমুদ, দেবাশীষ দেবু, সুর্বনা হামিদ, সময় টিভির সিলেট ব্যুরো প্রধান ইকরামুল কবির ইকু, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ, দৈনিক জৈন্তাবার্তা’র নুরুল ইসলাম, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ মতিন, সাবেক সভাপতি মনজুর আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো. মিনহাজ উদ্দিন, বাংলাভিউর ক্যামেরাপার্সন আহমদ রুবেল প্রমুখ।