নিউজ ডেস্ক :: পবিত্র রমজান দোয়া কবুলের মাস। আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য এটি বিশেষ উপহার। এই মাসে আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের দুয়ার খুলে দেন এবং প্রতিটি নেক কাজের প্রতিদান বৃদ্ধি করেন।
রমজানে দোয়া কবুলের বিশেষ তিনটি সময়ের কথা হাদিসে এসেছে, যখন বান্দার প্রতি আল্লাহর করুণার ধারা বর্ষিত হয়। অথচ না জেনেই অনেকে সময়গুলো অবহেলায় কাটিয়ে দেন। আসুন জেনে নিই, কোন সময়ে রমজানে দোয়া বেশি কবুল হয়।
১. ফজরের পর: রমজান মাসে ফজরের পর বেশির ভাগ মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। অথচ ইবাদত-বন্দেগি ও দোয়ার জন্য সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, তারপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহর জিকির করে, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তার জন্য একটি হজ ও একটি ওমরাহর সওয়াব রয়েছে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৬)
ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই দিনে আল্লাহকে স্মরণ করার সবচেয়ে উত্তম সময় ফজরের পর।’ (আল আজকার, পৃষ্ঠা: ১৫৫) বিজ্ঞ আলেমরা বলেন, ফজরের পর আল্লাহ জীবিকা বণ্টন করেন। তাই এ সময় ঘুমানো অপছন্দনীয়। বিশেষত রমজান মাসে যখন আল্লাহ তার অনুগ্রহের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেন এবং প্রতিটি নেক কাজের প্রতিদান বৃদ্ধি করেন।
২. ইফতারের আগমুহূর্ত: ইবাদত ও দোয়া কবুলের বিবেচনায় সূর্যাস্ত তথা ইফতারের পূর্বমুহূর্ত খুবই মূল্যবান। পূর্বসূরি আলেমরা ইফতারের আগের সময়টুকু দোয়া ও আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকতেন। কেননা, মহানবী (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৫২)
কিন্তু আমাদের সমাজের বেশির ভাগ মানুষ এ সময়ে ইফতার প্রস্তুত করার কাজে ব্যস্ত থাকে। বিশেষত নারীরা আজানের আগমুহূর্ত পর্যন্ত কাজে লেগে থাকে। তাই এই সময় ইফতার সামনে রেখে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।
৩. রাতের শেষ-তৃতীয়াংশ: আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য শেষ রাতের ইবাদত-বন্দেগি, দোয়া ও প্রার্থনার কোনো বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে এ সময়ের দোয়া ও প্রার্থনার প্রশংসা করে বলা হয়েছে, ‘তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী।’ (সুরা: আলে ইমরান, আয়াত : ১৭)
নবী (সা.) বলেন, ‘রাতের শেষ-তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আমাদের প্রতিপালক পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন—কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করব, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৪৫)
তাই রোজাদারের উচিত, সেহরির আগে বা পরে তাহাজ্জুদ আদায়ে সচেষ্ট হওয়া এবং এ সময় আল্লাহর দরবারে ক্ষমা ও কল্যাণ প্রার্থনা করা।
আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তারা যা বলে, সে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করুন এবং সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে আপনার প্রতিপালকের প্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন, রাতে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং দিনের প্রান্তগুলোতেও, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হতে পারেন।’ (সুরা: ত্বহা, আয়াত: ১৩০)