অনুসন্ধান নিউজ :: নারী নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদী নাগরিকবন্ধন থেকে এমন দাবি তোলা হয়।
এতে বক্তারা বলেন, আমিনুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন অনেক নারী। এনিয়ে কদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। এমনকি লিটনের সাথে ভুক্তভোগীদের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও ফাস হয়েছে। যাতে লিটনকে নিপীড়নের অভিযোগ স্বীকার করতে শোনা যায়।
বক্তারা বলেন, নারী নিপীড়ন দন্ডনীয় অপরাধ। এটি সামাজিকভাবে সমাধানের বিষয় নয়। তাই এমন ঘৃণ্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন আয়োজিত এই কর্মসূচীতে সংহতি প্রকাশ করে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাংস্কৃতিক সংগঠক পান্না জান্নাতের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ, সাংস্কৃতিক সংগঠক অম্বরিশ দত্ত, নিরঞ্জন দে যাদু, এনামুল মুনির, ভূমিসন্তান বাংলাদেশ সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিউর রহমান, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শহিদুজ্জামান পাপলু প্রমুখ।
এসময় বক্তারা আরো বলেন, লিটনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে নারী ও শিশু নিপীড়নের অভিযোগ থাকলেও প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ জানানোর সাহস করেননি। সম্প্রতি, যৌন নিগ্রহের শিকার এক নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ তুললে, বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এমন গুরুতর অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সকল কর্মকাণ্ড থেকে বহিষ্কার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন বক্তারা।
এছাড়া, যৌন হয়রানি বন্ধে যৌন নিপীড়ন বিরোধী বিশেষ সেল গঠন করা হচ্ছে বলেও জানান বক্তারা।
প্রসঙ্গত, আমিনুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ তুলেন তার থিয়াটারেরই এক নারী কর্মী। এনিয়ে আলোচনার মধ্যে আরও কয়েকজন নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিটনের বিরুদ্ধে হেনস্তা ও নিপীড়নের অভিযোগ আনেন। এরমধ্যে কয়েকজন শিশু বয়সে নিপীড়িত হওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন।
এরমধ্যে দুটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেগুলো আমিনুল ইসলাম লিটনের সাথে ভুক্তভোগী দুই তরুণীর আলাপ বলে দাবি করা হচ্ছে। ছড়িয়ে পড়া অডিও ক্লিপে পুরুষ কণ্ঠে নিপীড়নের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে শোনা যায়।
যদিও রোববার এক ফেসবুক পোস্ট আমিনুল ইসলাম লিটন এসব অভিযোগ মিথ্যে ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন। একই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া অডিও ক্লিপ তার নয় দাবি করে বলেছেন, এগুলো তার কণ্ঠের মতো করে এডিট করা হয়েছে।
এদিকে নারী নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে রোববার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতির পদ থেকে আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে দ্বৈতস্বরের প্রতিনিধি হিসেবে পাওয়া তার জোটের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য পদ।