নিউজ ডেস্ক :: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের নর্থ প্যাড এলাকার মাটির কম্পনকে প্রাকৃতিক ভূমিকম্প হিসেবে দাবি করেছে পেট্রোবাংলার তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি ওই এলাকায় শেভরনের খননকাজকে স্বাভাবিক রাখার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এ কমিটির প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, এ প্রতিবেদনে মূল ঘটনাটি আড়াল করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিবিয়ানায় যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা ন্যাচারাল ভূকম্পন। এ সঙ্গে গ্যাসফিল্ড খনন বা ড্রিলিংয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রতিবেদনে শেভরনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদন আজ পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
প্রতিবেদন দেওয়ার খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড এলাকার জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, নতুন কূপ খননকালে ভুল প্রক্রিয়ায় খনন করায় এ ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী এ কম্পনে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিপূরণ এড়াতে পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ছালিক মিয়া আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ তদন্তের প্রতিবাদ করব আমরা। কারণ, সঠিক তথ্য তুলে ধরা হয়নি। এটা এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।’
পাশের ইনাতগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান নোমান হোসেন বলেন, ‘এ রকম পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দেওয়া হবে, আমরা তা আগেই ধারণা করেছিলাম। আমরা এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তদন্তের দাবি করছি। পাশাপাশি আমরা এলাকাবাসীর যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ শেভরন থেকে আদায় করতে সরকারের সহযোগিতা চাই।’
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোছা. জিলুফা সুলতানা বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের কপি জেলা প্রশাসন এখনো পায়নি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলায় দেশের অন্যতম বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা অবস্থিত। এ গ্যাসক্ষেত্রের নর্থ প্যাডের পশ্চিমে নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক, জামারগাঁও, রাধাপুর, রামেরগাঁও, মধুরা, সাদুল্লাহসহ ৪২টি গ্রাম আছে। গ্রামগুলোয় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। গত শনিবার রাতে ও পরদিন রোববার সকালে ভূমিকম্পের মতো কয়েক দফায় কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। কিছুক্ষণ পরপর ভূমি কাঁপছিল। এ তীব্র কাঁপুনিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। অনেকে ছোটাছুটি করে আহত হন। উপজেলার দীঘলবাক ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ৭৬টি গ্রামে কয়েক শ বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। এলাকাবাসী রাতেই গ্যাসক্ষেত্রের সামনে এসে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করেন। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন এলাকাবাসীকে শান্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলা সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, বাপেক্সের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন ও পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রোডাকশন) মো. সালাহ উদ্দিনের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।