শিরোনাম :
শাবিতে নতুন ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ‍্যক্ষ সিলেট কয়লা আমদানীকারক গ্রুপ ও তামাবিল পাথর আমদানীকারক গ্রুপের মতবিনিময় সভা সুনামগঞ্জের শ্যামারচরে জামায়াতের সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল মধুপূর্ণিমা তিথিতে চারুআড্ডা’র আহ্বানে আলোকিত বিশ্ব গড়তে আলো হাতে দশ মিনিট সানাবিল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গোলাপগঞ্জে শহীদ পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ প্রদান সিলেটের গোলাপগঞ্জে অস্ত্রসহ যুবক গ্রেপ্তার এম ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবকদলের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা কিডনি বিশেষজ্ঞ দলের সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল পরিদর্শন সিলেটে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীর মুখে ‘মুহাম্মদের গান’ জাফলংয়ে লুৎফুর উদ্দিন মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান

সিলেট সীমান্তে চিনিই এখন নতুন গরু!

রিপোর্টার নামঃ
  • শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪
  • ৩৮ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক :: সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চিনি চোরাচালান ব্যাপক হারে বেড়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চোরাচালান করা চিনি জব্দ করেছে।

এক কেজি চিনি আপনি কত টাকা দিয়ে কেনেন? ১৭০ টাকা? ১৪৫ টাকা? যদি কেউ বলেন যে, তিনি প্রায় অর্ধেক দামে চিনি কিনছেন; এটা শুনে কি আপনি অবাক হবেন না? প্রতি কেজি চিনি ৮০ টাকা থেকে ৮৫ টাকা দরে?

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের রনিখাই ইউনিয়নের চোরার বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।

গত দুই মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম রেকর্ড পরিমাণ কমলেও, দেশে চিনির দাম চড়া। এ অবস্থায় সীমান্তবর্তী জেলার অবৈধ ব্যবসায়ীরা কম দামে চিনি বিক্রি করছেন।

ভারতে চিনি বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৬ রুপিতে (৫৩ থেকে ৬০ টাকা)। একটি ৫০ কেজির চিনির বস্তার দাম প্রায় তিন হাজার টাকা বা তার কম। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে এক বস্তা চিনি বিক্রি হয় চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায়।

যদিও এ দাম দূরত্বের সমানুপাতিক হারে বাড়ে। কোম্পানীগঞ্জে চিনির দাম দাম পাঁচ হাজার টাকা এবং অন্যদিকে সিলেট শহরে তা বিক্রি হচ্ছে ছয় হাজার টাকায়।

এ ব্যবসা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী গ্রামবাসীদের বিপুলসংখ্যক এর সঙ্গে জড়িত।

২০১৬ সালে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সিলেটের ৫টি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে। অতঃপর হাইকোর্ট সিলেটের সব কোয়ারিতে পাথর ক্রাশার ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে এলাকার পাথর কোয়ারিগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই ব্যবসা হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন।

অন্য জায়গায় পাথরের কাজে যুক্ত থাকা শ্রমিকরা আগেই ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের যাওয়ার অন্য কোনো জায়গা ছিল না। এমনকি তাদের করার মতো কোনো কাজও ছিল না।

এমনকি এসব জায়গার মাটিও কৃষিকাজের জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ এ মাটির পাতলা স্তরের ঠিক নীচেই থাকে পাথর।

ভারতে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন দেশে চিনির দাম বাড়তে থাকে। তাই এসব গ্রামবাসীদের জন্য এটি একটি বিশাল এবং অস্থায়ী সুযোগ হিসেবে কাজ করে।

স্থানীয় চিনি ‘ব্যবসায়ীদের’ মতে, যারা বস্তা বয়ে নিয়ে সীমান্ত পার হন, তাদের প্রতি বস্তার জন্য ৩০০ টাকা করে দেওয়া হয়। বাইক চালকেরা চার বস্তা চিনি বহন করেন এবং প্রতি বস্তার জন্য ২০০ টাকা পান । বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) এবং বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স)-এর গতিবিধির ওপর নজর রাখা ‘লাইনম্যান’কে দেওয়া হয় ৫০ টাকা। দূরত্বের সঙ্গে বাড়ে বহনের খরচও।

এক চিনি ব্যবসায়ী জানান, ভারতীয় অংশে রাতে এবং বাংলাদেশের অংশে দিনে চিনি বহনের এ কাজ চলে।

কয়েক দশক ধরে মাদক ও অন্যান্য পণ্য ছাড়াও গবাদিপশু ছিল সীমান্তে চোরাচালানের প্রধান বস্তু।

ভারতীয় নৃতাত্ত্বিক মালিনী সুর তার বই ‘জঙ্গল পাসপোর্টস: ফেন্সেস, মবিলিটি এবং সিটিজেনশিপ অ্যাট দ্য নর্থইস্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ বর্ডার’-এ বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন কীভাবে সীমান্তের উভয়দিকে গবাদিপশু পাচার একটি আনুষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।

২০১৭ সালে ভারতে গবাদিপশুর মুসলিম বিক্রেতাদের গণপিটুনি এবং হিংসাত্মক জনতার আক্রমণের ঘটনা ঘটলে এ ধরনের পাচার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে যে, ভারতীয় গবাদিপশু কেবল মনোনীত পশু করিডোর দিয়েই দেশে প্রবেশ করতে পারবে।

কিন্তু চিনির ক্ষেত্রে এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার উপায় নেই। ফলে এটি পাচার আরও বিপজ্জনক। তবু কেন মানুষ এত ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত?

চোরার বাজারের স্থানীয় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘তারা আর কী করবে?’

তিনি বলেন, ‘এ এলাকার প্রায় ৫০ শতাংশ পরিবারের সদস্য এ কাজের সঙ্গে জড়িত । এটি একটি অস্থায়ী কাজ, স্থায়ী নয়।’

চিনি চোরাচালান এ এলাকায় এতটাই স্বাভাবিক যে, উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের অন্য একটি বাজারে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে স্থানীয় এক দোকানদার ভেবেছিলেন আমরা চোরাচালান করা চিনি কিনতে আগ্রহী কি না।

জানা গেল তিনিও এ ব্যবসায়ীদের একজন ছিলেন। সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন কী পরিমাণ চিনি আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা চাহিদার ওপর নির্ভর করে। ‘আমরা চাইলে চিনি ম্যানেজ করতে পারি,’ বলেন তিনি।

এলাকাটিতে ঘোরার সময় আমরা দিনের বেলা চিনি বহনকারী এক-দুটি মোটরবাইক দেখতে পাই। সন্ধ্যার পর সীমান্তের কাছে একটি মোড়ে কিছু বিজিবি সদস্যকে পাহারা দিতে দেখা যায়।

আবির নামের একজন কিশোর থ্রি-হুইলার চালক জানায়, চোরাকারবারিদের ধরার জন্য বিজিবির লোকজন সেখানে অবস্থান করছিল। মাটির রাস্তাগুলো এতই সরু যে, আমাদের গাড়ি বাজারে রেখে থ্রি-হুইলার সার্ভিস নিতে হয়েছিল। বিজিবি সদস্যরাও একই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পায়ে হাঁটছিলেন।

উত্তমা ছড়ার কাছে নো ম্যানস ল্যান্ডে ভারত-বাংলা সীমান্ত অতিক্রম করে বিশাল পাথরের একটি সুন্দর খাড়িতে আমরা একদল স্থানীয় লোককে সীমান্তের দিকে আসতে দেখি।

আমাদের সঙ্গে খাড়িতে যাওয়া আরিফ নামক একজন স্থানীয় যুবক বলেন, তারা মেঘালয়ের একটি বাজার থেকে চিনি আনতে যাচ্ছিলেন। আরিফ জানান, তার গ্রামের বেশির ভাগ পরিবারই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

আবির ও আরিফ দুজনেই জানান, তাদের পরিবার পাথরের ব্যবসা করে এবং বেশ কিছু কোয়ারির মালিক। তারা বলেন, এলাকায় পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে সচ্ছল পরিবারগুলোর নিয়তি বদলে গিয়েছে।

এখন জীবিকার উপায় না পেয়ে তারা চোরাচালানসহ অন্যান্য কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।

আবির বলেন, ‘আমাদের এক প্রতিবেশী আছেন যার কোটি কোটি টাকা ছিল। তিনি এখন চিনি পাচার করেন। এখনো চিনিই আনতে গেছেন।’

এলাকায় ব্যাপক বেকারত্বের কথা বলতে গিয়ে স্থানীয় এনজিও কর্মী নুরুন্নবী সোহাগ এর পর্যটন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর সিলেটের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এর নিকটবর্তী উত্তমা ছড়া দুঃসাহসিক ভ্রমণকারীদের আবেদন সত্ত্বেও যথাযথ সড়ক যোগাযোগের অভাবে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারেনি।

সোহাগ বলেন, ‘ভালো রাস্তা হলে এ এলাকায় পর্যটকরা আসতে পারবেন। মেঘালয়ের সুন্দর হিমালয়ের পাদদেশ এবং উত্তমা ছড়ার পাথরের মধ্য দিয়ে চকচকে পানির প্রবাহ বিছনাকান্দির চেয়ে কম আকর্ষণীয় নয়। পর্যটকেরা এলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের আয়ের সুযোগও তৈরি হবে।’

স্থানীয় চিনি ব্যবসায়ীরা জানান, জেলার গোয়াইনঘাট ও জৈন্তিয়াপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়েও চিনি আসে।

শুধু সিলেটেই নয়, সারাদেশে চিনি চোরাচালান এখন খুবই সাধারণ ব্যাপার। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নেত্রকোনা, কুমিল্লাসহ সীমান্তবর্তী অনেক জেলা থেকে চোরাচালান করা চিনি জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিলেট সীমান্তে চোরাকারবারিরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়।

সূত্র: দ্য বিজসেন স্ট্যান্ডার্ড

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2021 Anushondhan News
Developed by Host for Domain