নিউজ ডেস্ক :: প্রচণ্ড বেগে উপকূলে আছড়ে পড়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালানোর পর দাপট কমেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের। এরই মধ্যে ক্রমেই দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড়টি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। তবে রাতভর চলা এই ঝড়ের তাণ্ডবে ইতোমধ্যেই দেশের পাঁচ জেলায় ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাছ উপড়ে যোগাযোগ বন্ধ হলেও মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোররাত নাগাদ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের সড়ক যোগাযোগও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। দুটি মহাসড়কেই সীমিত আকারে যান চলাচল শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে ৬ লাখ মানুষকে।
অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেই সঙ্গে ঝড়ে দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি ও সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকলেও এরই মধ্যে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করেছে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)।
এর আগে সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিকেল থেকে রাত ৩টা অবধি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের ছয় জেলায় ১১ জন মারা যান। এরমধ্যে কুমিল্লায় একই পরিবারের তিনজন ছাড়াও ভোলায় তিনজন, সিরাজগঞ্জে দুইজনসহ নড়াইল, শরীয়তপুর ও বরগুনায় একজন করে মোট দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার রাত ১০টার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল এলাকায় গাছে পড়ে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- হেসাখাল খামারপাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন (২৮), তার স্ত্রী সাথী আক্তার (২৪) এবং তাদের চার বছরের শিশু কন্যা লিজা। নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান মেহেবুব এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর ঠিক এক ঘণ্টা আগে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্বমোহন ও শিল্পপার্কের মাঝখানে থাকা যমুনা নদীর ক্যানেলে সিত্রাংয়ের প্রভাবে নৌকা ডুবে মা ও ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর আসে। রাত নয়টার দিকের ওই নৌকাডুবির ঘটনায় নিহতরা হলেন- পূর্বমোহনপুর গ্রামের খোকনের স্ত্রী আয়েশা খাতুন (২৮) ও তার ছেলে আরাফাত হোসেন (২)। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ মোসাদ্দেক হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, সিরাজগঞ্জে নৌকাডুবির এক ঘণ্টা আগে বরগুনায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গাছচাপায় আমেনা খাতুন নামে শতবর্ষী এক বৃদ্ধা মারা যান। রাত ৮টার দিকে জেলার সদর উপজেলার সোনাখালী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ঘরে বসে ভাত খাচ্ছিলেন বৃদ্ধা আমেনা খাতুন। ওই সময় ঘরের পাশে থাকা একটি চাম্বল গাছ হঠাৎই উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে। এতে নিচে চাপা পড়েন ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
অন্যদিকে, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নে গাছচাপা পড়ে মনির স্বর্ণকার (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার পথে ঝড়ের প্রভাবে উপরে পড়া গাছচাপায় গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নেয়। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক মনিরকে মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়া ভোলা সদর উপজেলা ধনিয়া ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মফিজল ইসলাম (৬০) এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। রাত ৮টার দিকে ঝড়ের প্রভাবে তার বসতঘরের ওপর একটি তেঁতুল গাছ ভেঙে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তার এক ছেলে ও এক মেয়েও আহত হয়েছে। তবে তারা স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
প্রায় একই সময়ে ভোলার দৌলতখান পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ঘরচাপায় বিবি খাদিজা (৮০) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো. জাকির হোসেন ও শশিভূষণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে শুরুর পরপরই বয়ে যাওয়া দমকা হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে ওপরে পড়ে নড়াইলে মর্জিনা বেগম (৩২) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। সোমবার বেলা ১২টার দিকে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরের পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় বসতঘরের ওপর গাছ পড়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় সাফিয়া খাতুন (৬৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান সোহেল।