অনুসন্ধান নিউজ :: সিলেটের দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে আরিফুল ইসলাম রাহাত খুনে ব্যবহৃত চাকুটি উদ্ধার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ সুরমার হাজীপুর এলাকায় ডোবা জমি থেকে এটি উদ্ধার করা হয়। চাকুটির দৈর্ঘ্য বাটসহ সাড়ে ৭ ইঞ্চি।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর মীরাবাজারে সিলেট মেট্রো ও জেলা সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। ব্রিফিং করেন সিলেট মেট্রো ও জেলা সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা।
সিআইডি জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের দুর্গম চর এলাকা থেকে রাহাত খুনের প্রধান আসামি সামসুদ্দোহা সাদীকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, রাহাত খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ায় ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে সিআইডি। বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধরের নির্দেশনায় এলআইসি’র একটি চৌকস টিম কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের দুর্গম চর এলাকা থেকে মামলার এজাহারনামীয় প্রধান আসামি সামসুদ্দোহা সাদীকে (২৩) গ্রেফতার করে।
সাদীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিআইডি জানায়, তিনি হত্যার ঘটনা স্বীকার করেছেন। বয়সে সাদী ছিলেন রাহাতের চেয়ে বড়। এজন্য তিনি তিনি রাহাতের কাছে ‘জ্যেষ্ঠতা’ (সিনিয়রিটি) দাবি করে আসছিলেন। এ নিয়ে উভয়ের বিবাদের অংশ হিসেবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।
ঘটনার সময় সাদীর পকেটে চাকু ছিল বলে জানায় সিআইডি। সেটি দিয়েই তিনি রাহাতকে ছুরিকাঘাত করেন।
সিআইডি জানায়, ঘটনার পর সাদী পালিয়ে ঢাকার মিরপুরে অবস্থান করেন। সেখান থেকে আত্মগোপনে কুষ্টিয়ায় চলে যান তিনি। তাকে গ্রেফতারের পর কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে গতকাল বুধবার বিকালে তাকে সিলেটে পাঠানো হয়।
সিলেটে সিআইডি’র কাছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকুর বিষয়ে তথ্য দেন সাদী। তার দেওয়া তথ্যানুসারেই দক্ষিণ সুরমার হাজীপুর এলাকায় ডোবা জমি থেকে এটি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর আরিফুল ইসলাম রাহাত (১৮) প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। এসময় চাচাতো ভাই রাফি তার সঙ্গে মোটরসাইকেলে ছিলেন। যাবার পথে চাচাতো ভাইকে কলেজ গেটে রেখে এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে কলেজ ক্যাম্পাসে যান রাহাত। পরে বের হওয়ার সময় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কলেজের মূল গেট থেকে ২০-২৫ গজ ভেতরে সামসুদ্দোহা সাদী ও তানভীর আহমদ সিলভার রঙ্গের একটি পালসার মোটরসাইকেলযোগে পেছন থেকে এসে রাহাতকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। পরে রাহাতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রাহাত দক্ষিণ সুরমা উপজেলার পুরাতন তেতলি এলাকার সুরমান আলীর ছেলে ও দক্ষিণ সুরমা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।
এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে তার চাচা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা নয়-২১/২২/১০/২১। মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়।
দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি কামরুল হাসান তালুকদার তখন সিলেটভিউকে বলেন, ‘রাহাতের চাচা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় ৩ জনের নামোল্লেখ ও ৫-৭ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়েছে।’
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার থানা এলাকার সিলাম পশ্চিমপাড়ার মৃত মোবারক আলীর ছেলে সামসুদ্দোহা সাদীকে। অপর দুই আসামি হলেন একই এলাকার জামাল মিয়ার ছেলে তানভীর আহমদ (১৯) ও দক্ষিণ সুরমার তেতলি ইউনিয়নের আহমদপুর গ্রামের মৃত গৌছ মিয়ার ছেলে ওলিদুর রহমান সানী।
এদের মধ্যে সাদী ছাত্রলীগের কর্মী। তিনি সিলেট ছাত্রলীগের কাশ্মীর গ্রুপের সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। দক্ষিণ সুরমা কলেজের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। কলেজে অধ্যয়নকালীন একবার তাকে বহিষ্কারও করা হয়।