সিলেট কারাগারে ২০ বছর ধরে একজনের চাকরিতে অন্যজন!

রিপোর্টার নামঃ
  • সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১
  • ২২৬ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক :: এই গল্প একজনের স্বপ্নভঙের। এই গল্প প্রতারণার। আদতে এটি কোনো গল্পই নয়, বরঞ্চ নির্মম বাস্তব ঘটনা। যিনি চাকরি করার জন্য নিয়োগ পরীক্ষা দিলেন, উত্তীর্ণ হলেন, তিনি চাকরিতেই নেই। অথচ তার নামে ২০ বছর ধরে চাকরি করে চলেছেন অন্য আরেকজন! অবিশ্বাস্য এই প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে সিলেটেই।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে মঈন উদ্দিন খান নামের এক ব্যক্তি কারারক্ষীর চাকরি করছেন। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তথ্যানুসারে তার গ্রামে বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামে। কিন্তু সে গ্রামে যে মঈন উদ্দিন খান আছেন, যিনি কারারক্ষী নিয়োগ পরীক্ষাও দিয়েছিলেন, তিনি চাকরিতে নেই। তাহলে হবিগঞ্জের মঈন উদ্দিন খান নাম-পরিচয়ে যিনি চাকরি করছেন, তিনি কে? এ নিয়েই এখন চলছে তদন্ত।
স্থানীয় এবং কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ আগস্ট মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন খানকে একটি চিঠি পাঠান সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) মো. কামাল হোসেন। চিঠিতে বলা হয়, সিলেট কারাগারে মঈন উদ্দিন খান নামের এক কারারক্ষী (ক্রমিক নম্বর ২১৮৬২) চাকরি করছেন, যার বাড়ি শাহজাহানপুরে। চিঠির সঙ্গে একটি প্রত্যয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। সত্যতা যাচাই করে যেন চেয়ারম্যান প্রত্যয়নপত্র দেন।

কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান যোগাযোগ করেন শাহজাহানপুর গ্রামের মঈন উদ্দিন খানের সঙ্গে। কিন্তু মঈন জানান, তিনি কারারক্ষী পদে চাকরি করছেন না। তার নাম-পরিচয় ব্যবহার করে অন্য কেউ হয়তো চাকরি করছেন।

প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাধবপুর থানায় একটি জিডি করেন মঈন উদ্দিন খান।
এদিকে, শাহজাহানপুর ইউপি চেয়ারম্যান গত ১৬ নভেম্বর সিলেটের ডিআইজি প্রিজনস কামাল হোসেনকে একটি ফিরতি চিঠি দেন। যাতে বলা হয়, তার ইউনিয়নে যে মঈন উদ্দিন খান আছেন, তিনি কারাগারে চাকরি করেন না; তিনি একজন ফার্মেসি ব্যবসায়ী।

চেয়ারম্যানের চিঠি পেয়ে ডিআইজি প্রিজনস শাহজাহানপুরের মঈন উদ্দিন খানকে সশরীরে সিলেট কারাগারে হাজির হতে বলেন। সে অনুযায়ী মঈন কারা কর্তৃপক্ষের সামনে হাজির হন।

মঈন উদ্দিন খান জানান, তিনি ২০০১ সালে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে কারারক্ষী নিয়োগ পরীক্ষা দেন। কিন্তু সে পরীক্ষার ফলাফল তিনি আর জানতে পারেননি। এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি, চাকরিতে যোগদানের অনুমতিপত্র তিনি পাননি। সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান যখন বিষয়টি নিয়ে খোঁজ করছিলেন, তখন তিনি তা জানতে পারেন।
মঈন আরও জানান, কারারক্ষী পদে চাকরি হয়নি ধরে নিয়ে তিনি পরে ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করেন।

শাহজাহানপুরের মঈন উদ্দিন খানের বক্তব্য শুনে পুরো ঘটনা তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে হবিগঞ্জ কারাগারের জেলার জয়নাল আবেদীন ভূঞাকে নির্দেশ দিয়েছেন সিলেটের ডিআইজি প্রিজনস। পরে জয়নাল আবেদীন শাহজাহানপুরের মঈন উদ্দিন খান ও বর্তমানে কাররক্ষী পদে চাকরি করা ব্যক্তিকে কাগজপত্রসহ গত শনিবার হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু শাহজাহানপুরের মঈন উদ্দিন হাজির হলেও চাকরিরত ব্যক্তি হাজির হননি।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ কারাগারের জেলার মো. জয়নাল আবেদীন ভূঞা বলেন, শাহজাহানপুরের মঈন উদ্দিন খান তদন্তের জন্য হাজির হয়েছিলেন। তাকে চিহ্নিত করে এলাকার মুরব্বিরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু যিনি এ নাম ব্যবহার করে চাকরি করছেন, তিনি হাজির হননি।
জানতে চাইলে সিলেটের ডিআইজি প্রিজনস মো. কামাল হোসেন সিলেটভিউকে বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের প্রয়োজনে সব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থেই এখন বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।’সূত্র:সিলেটভিউ

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2021 Anushondhan News
Developed by Host for Domain