নববধূকে নিয়ে ফিরছিলেন বাড়ি, পথে চলন্ত গাড়ি থেকে বরের লাফ

রিপোর্টার নামঃ
  • সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১
  • ২২৮ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক :: নববধূকে নিয়ে ফিরছিলেন বাড়ি। পথে চলন্ত মাইক্রোবাস থেকেই লাফ দেন বোরহান উদ্দিন (২১) নামের এক যুবক। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের দরবেশপুর এলাকায় ঘটেছে এমন ঘটনা।

নিহত বোরহান উদ্দিন মেহেরপুর সদর উপজেলার নবগঠিত বারাদী ইউনিয়নের নতুন দরবেশপুর গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী মিয়াজান মণ্ডলের ছেলে ও মেহেরপুর সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আর তার স্ত্রী পপি খাতুন দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, পপি খাতুনের সঙ্গে বোরহানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২৭ নভেম্বর দুই পরিবারের অগোচরে তারা বিয়ে করেন। এর পর সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে সদর উপজেলার সিংহাটি গ্রামে চাচাতো বোনের বাসায় গিয়ে ওঠেন বোরহান।

এদিকে, ওইদিন রাতে বাড়িতে না ফেরায় বোরহানকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। পরে চাচাতো বোনের বাড়িতে অবস্থানের খবর জানতে পারেন তার বাবা। ওই বাড়িতে রাত ১০টার দিকে গিয়ে বিয়ের বিষয়টি জানতে পারেন তারা।

নিহত বোরহানের মামাতো ভাই আলামিন হোসেন বলেন, ‘ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে জানিয়ে বোরহানের বাবা আমাকে ডাকেন। তারা বাড়িতে পৌঁছালে রাত ১০টার দিকে আমি মোটরসাইকেলে এবং একটি মাইক্রোবাসে বোরহানের আরেক মামাতো ভাই ও তার বাবা সেই চাচাতো বোনের বাড়িতে যাই। সেখানে পৌঁছানোর পর বোরহানের বাবা তাদের বিয়ে মেনে না নিয়ে বোরহানকে নিয়ে চলে আসতে যান। পরে দুই পরিবাবের অন্যান্য সদস্য বোরহানের বাবাকে বোঝালে তাদের বিয়েতে সম্মত জানিয়ে ছেলেকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য বলেন। স্ত্রীকে রেখে একা বাড়িয়ে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন বোরহান।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাতেই মাইক্রোবাসে নববধূ পপি খাতুনকে নিয়ে তার বাবা নতুন দরবেশপুর গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। যাওয়ার পথে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুলপালা নামক স্থানে পৌঁছলে চলন্ত মাইক্রোবাসের জানালা থেকে লাফ দেন বর বোরহান। এ সময় সামনে থেকে আসা একটি ট্রাকের পেছনের চাকায় পিষ্ট হন তিনি।’

পপি খাতুনের এর আগেও দুবার বিয়ে হয়েছিল। এজন্য ছেলের বাবা প্রথমে মেনে নিতে না পারলেও পরে সবার অনুরোধে মেনে নিয়েছিলেন। মাইক্রোবাসে আসার সময় এ নিয়ে ছেলেকে কটূক্তি করায় বাবার ওপর অভিমানে আত্মহত্যা করেছেন বোরহান উদ্দিন, যোগ করেন মামাতো ভাই আলামিন হোসেন।

দুই ভাইবোনের মধ্যে বোরহান ছিলেন বড়। এ বিষয়ে জানতে নিহত বোরহানের বাবা মিয়াজান ও সদ্য বিবাহিত নববধূ পপি খাতুনের মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাজিদ হাসান বলেন, ‘রোববার তার পরিবারের সদস্যরা জানান, ব্যাডমিন্টন খেলার সময় পড়ে গিয়ে বোরহান আঘাত পেয়েছেন। আঘাতের আলামত দেখে সন্দেহ হলে আমাদের চাপাচাপিতে চলন্ত মাইক্রোবাস থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি জানান তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বোরহানের দুই পা ভেঙে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া আছে। হাসপাতালে আসার কিছুক্ষণ পর জরুরি বিভাগে তার মৃত্যু হয়।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়োজিত পুলিশ লাইন্সের নায়েক বলয় বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি জানান, বোরহান তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীসহ তার বাবা ও মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে মেহেরপুরে যাচ্ছিল। এ সময় মাইক্রোবাসের জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বোরহান। পরে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের জন্য বোরহানের মরদেহ মেহেরপুর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2021 Anushondhan News
Developed by Host for Domain