নিউজ ডেস্ক :: বাংলাদেশের কোনো বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে ফোনে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
কাল বুধবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ব্লিঙ্কেন মুঠোফোনে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে কথা বলেন। প্রায় ৩০ মিনিটের আলোচনায় আগামী বছর সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই দেশের সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তাঁরা কথা বলেন। এ সময় র্যাব এবং র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গটি তোলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে আলোচনার আশ্বাস দেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে ফোন করেন, তখন তিনি বঙ্গভবনে ছিলেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও নৈশভোজে যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গভবনে থাকাকালে ফোনটি ধরেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বুধবার সকালে জানানো হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রায় ৩০ মিনিটের ফোনালাপের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আগামী বছর যৌথভাবে দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্যাপন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে অনেকগুলো ফোরামে আলোচনা হবে। দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর বিনিময় হবে।
র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, র্যাব গঠনের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো রকম বাড়াবাড়ি করলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাই র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। অথচ এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র তা বাংলাদেশকে জানায়নি। অপ্রত্যাশিতভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা বাংলাদেশের জন্য অসুবিধার সৃষ্টি করে।
এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে আলোচনার কথা বলেন। তিনি আগামী বছর মানবাধিকার বিষয়ে আলাদা সংলাপ করা যায় কি না, সে বিষয়টির উল্লেখ করেছেন। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, নতুন মার্কিন প্রশাসন মানবাধিকারের ওপর অনেক জোর দিয়েছে।
এ সময় আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের অনেক বিষয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। আপনাদের বিশেষ কিছু থাকলে আমাদের জানাবেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কোনো ব্যবস্থা নেবেন না। আপনার কাছে যখন আমার নম্বরটা আছে, যেকোনো সময় আপনি আমাকে ফোন করতে পারেন। ব্লিঙ্কেনও এ সময় বলেন, আপনার কোনো ইস্যু থাকলে আপনিও আমাকে সরাসরি ফোন করবেন।’
র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। তিনি আলাপ করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্সের ফেলো অধ্যাপক মো. শহীদুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা বহুমাত্রিক। ফলে এই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হলে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্বকে বিবেচনায় নিয়ে খোলামনে ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। বাইডেন প্রশাসন মানবাধিকার ইস্যুতে গুরুত্ব দিচ্ছে, এ বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে বুঝতে হবে।’