নিউজ ডেস্ক :: গেল বছরও যেখানে পাসের হার ছিল ৭৯.২৩, এ বছর সেখানে ৯৭.১২। এক লাফে পাসের হার বেড়েছে ১৭.৯৯ ভাগ! এমনই চমকে দেওয়া ফলাফল হয়েছে এবার সিলেট শিক্ষা বোর্ডে। ফলাফলের অগ্রগতির পেছনে মানবিক বিভাগই মূল কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রকাশিত হয়। সারাদেশের ফলাফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সকল বোর্ডে প্রকাশিত হয় ফলাফল।
এ বছরের ফলাফলের চিত্র
সিলেট বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ৯ বছরের মধ্যে এবারই এ বোর্ডে সবচেয়ে ভালো ফলাফল হয়েছে। এ বছর সিলেট বোর্ডে পাসের ৯৬.৭৮। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮৩৪ জন।
এবার বোর্ডে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭০০ জন। পাসকৃতদের মধ্যে ছেলে ৫১ হাজার ৩৮৬ জন, মেয়ে ৬৪ হাজার ৩১৪ জন।
এবার জিপিএ ৫ পাওয়া মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ২ হাজার ২৮ জন ছেলে এবং ২ হাজার ৮০৬ জন মেয়ে। এদিকে, এবার বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৫.২৯, মানবিক বিভাগে পাসের হার ৯৭.২৬ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৯৫.৬৩।
সিলেট বোর্ডের জেলাভিত্তিক ফলাফলে দেখা গেছে, সিলেট বিভাগের মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে সুনামগঞ্জ। এ জেলায় পাসের হার ৯৭.৫৩। সিলেট জেলায় পাসের হার ৯৭.৪২, মৌলভীবাজারে ৯৬.৭৯ এবং হবিগঞ্জে পাসের ৯৬.৫৫।
তবে জিপিএ ৫ পাওয়ার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে সিলেট জেলা। মোট জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের মধ্যে সিলেটের ২২৯৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের ১০৪০ জন, হবিগঞ্জের ৮৬৯ জন এবং সুনামগঞ্জের ৬২৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে।
এ বছর সিলেট জেলায় ৪৩ হাজার ৫৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪১ হাজার ৮৩২ জন পাস করেছে। সুনামগঞ্জে ২৬ হাজার ৪৯ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ২৫ হাজার ৩৪৩ জন। মৌলভীবাজারে পরীক্ষায় বসেছিল ২৬ হাজার ৩৯৪ জন। এর মধ্যে পাসকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৪০৬। এ ছাড়া হবিগঞ্জ জেলায় ২৪ হাজার ৫৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে ২৩ হাজার ১১৯ জন পাস করেছে।
এবার পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে আছে। ছেলেদের পাসের হার যেখানে ৯৬.৩৫, সেখানে মেয়েদের পাসের হার ৯৭.১২।
যেমন ছিল আগের ৮ বছরের ফলাফল
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩ সালে এ বোর্ডে ৫৮ হাজার ৫০৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৫২ হাজার ৪৫ জন। সেবার পাসের হার ছিল ৮৮.৯৬।
২০১৪ সালে ৬৮ হাজার ৮৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ৬০ হাজার ৭৫০ জন। পাসের হার ছিল ৮৯.২৩। ২০১৫ সালে বোর্ডে ৭২ হাজার ২৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করে ৫৮ হাজার ৯৩২ জন। পাসের হার ছিল ৮১.৮২।
২০১৬ সালে ৮৪ হাজার ৪৪৮ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ৭১ হাজার ৫৮৬ জন। পাসের হার ছিল ৮৪.৭৭। এরপর ২০১৭ সালে ৯৩ হাজার ৯১৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসে ৭৫ হাজার ৩৭৪ জন পাস করে। ৮০.২৬ ছিল পাসের হার।
২০১৮ সালে ১ লাখ ৮ হাজার ৯২৮ জন পরীক্ষার্থী ছিল এসএসসিতে। সেবার ৭০.৪২ হারে পাস করে ৭৬ হাজার ৭১০ জন। ২০১৯ সালে পরীক্ষায় বসে ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭১ জন, পাস করে ৮০ হাজার ১৬২ জন। পাসের হার ছিল ৭০.৮৩।
সর্বশেষ, ২০২০ সালে সিলেট বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ১০৪ জন। তন্মধ্যে ৯১ হাজার ৪৮০ জন পাস করে; পাসের হার ছিল ৭৮.৭৯।
এবার ফলাফল ভালো হওয়ার কারণ
গত বছরের চেয়ে এ বছর সিলেট বোর্ডে এসএসতি পাসের হার বেড়েছে ১৭.৯৯ ভাগ। কিন্তু গতবারের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি খুব বেশি ছিল না।
গেল বার ১ লাখ ১৬ হাজার ১০৪ জন পরীক্ষার্থী ছিল। যা এ বছর ৩ হাজার ৪৪৯ জন বেড়ে হয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৩ জন। কিন্তু গত বছরের চেয়ে এবার পাসকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ২৪ হাজার ২২০ জন!
শিক্ষাবিদরা, এই ফলাফলকে চমক হিসেবেই অভিহিত করছেন।
পাসের হারে এই বড় অগ্রগতির কারণ কী? এমন প্রশ্নে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার বেড়েছে ১৭.৯৯ ভাগ। বিভাগভিত্তিক যদি আমরা হিসেব করি, গেল বছরের চেয়ে এবার বিজ্ঞান বিভাগে ৪.৮৩ ভাগ পাসের হার বেড়েছে। মানবিকে বেড়েছে ২২.৫ ভাগ। এ ছাড়া ব্যবসায় শিক্ষায় ৮.২৩ ভাগ বেড়েছে পাসের। এখানে লক্ষণীয় বিষয়, মানবিকে পাসের হার অনেক বেড়েছে এ বছর। এজন্যই সিলেট বোর্ডে এবার সামগ্রিক ফলাফলে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মানবিক বিভাগে শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। এজন্য আমরা যদি মানবিক বিভাগে নজর দেই, তাহলে প্রতি বছরই আমাদের ফলাফল ভালো হবে।’
সংশ্লিষ্টরা ফলাফলে অগ্রগতির আরেকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। এ বছর শতভাগ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে, এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গেল বছরের চেয়ে ১৪২টি বেড়ে ১৮৫টি হয়েছে। শতভাগ পাস এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ফলাফলে।
এ ছাড়া এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ার বিষয়টিও একটি কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই। বিষয় কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা অনেকটা সহজ হয়ে যায়।