ওয়েছ খছরু :: সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরের ওপারে হাজার হাজার পণ্যবাহী ট্রাক আটকে আছে। শুক্রবার থেকে ওই ট্রাকগুলো সীমান্তের ওপারের ডাউকী এলাকায় আটকা পড়েছে। স্থানীয় চুনাপাথর আমদানিকারকদের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ না পাওয়ায় এসব ট্রাক এসে প্রবেশ করতে পারছে না। এতে করে শুক্রবার থেকে ওই বন্দরের আমদানি-রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে তিন দিনে সরকার প্রায় তিন কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা জানিয়েছেন, তামাবিল স্থলবন্দরে তথ্য অটো ও এসএমএস মেশিন স্থাপন করার কারণে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে পণ্য দেশে ঢুকাচ্ছেন না। স্থাপন করা এই মেশিন বাদে পূর্বের মতো আমদানি- রপ্তানির পদ্ধতি চালু করলে তারা পণ্য নিয়ে আসবেন।
নতুবা বন্ধই থাকবে আমদানি- এমন ঘোষণা ব্যবসায়ীদের। সিলেটের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। আর এ রাজ্যের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির অন্যতম রুট হচ্ছে তামাবিল স্থলবন্দর। নানা ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি করলেও মূলত চুনাপাথর আমদানির জন্য পরিচিত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই স্থলবন্দর।
ব্যবসায়ীদের তথ্য; প্রতিদিন ওই বন্দর দিয়ে ৮০০-৯০০টি পাথর বোঝাই ট্রাক প্রবেশ করে। দুই দেশের কাস্টমের প্রক্রিয়া শেষ করার পর ভারত থেকে এসে এসব পাথর খালাস করা হতো তামাবিল স্থলবন্দরের নিজস্ব জায়গায়। এরপর ওখান থেকে ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে নিয়ে ভেঙে ওই পাথর বিক্রি করেন।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তামাবিল স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ব্যবসায়ীদের জন্য ভেতরে জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যবসায়ীরা বন্দর ব্যবহার না করে এসব পাথর পাশেই থাকা নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। এ নিয়ে রশি টানাটানি রয়েছে।
সার্বিক দিক বিবেচনায় সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে তামাবিল স্থলবন্দরের রাজস্ব বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত পণ্য আনা বন্ধ করতে তথ্য অটো এসএমএস মেশিন বসিয়েছে। মেশিনটি বসানোর পর ব্যবসায়ীদের পণ্য মেশিনের মাধ্যমে নিয়ে আসার জন্য চিঠি দেয়া হয়। এবং গত শুক্রবার থেকে এই প্রক্রিয়া চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন থেকে ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন- দেশের কোনো স্থলবন্দরে এখন পর্যন্ত এই মেশিন চালু হয়নি। কেবলমাত্র তামাবিল স্থলবন্দরেই চালু করা হয়েছে। এজন্য এটিকে তারা ষড়যন্ত্র হিসেবেও দেখছেন।
কারণ উল্লেখ করে তারা বলেন- এখন প্রতিদিন ৮০০-৯০০টি পণ্যবাহী ট্রাক এসে পণ্য খালাস করে চলে যেতে পারে। কিন্তু অটোমেশিন ব্যবহার শুরু হলে প্রতিদিন ১০০-১৫০টি ট্রাক ঢুকতে পারবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরাই। আর এতে ব্যবসায়ীদের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। এ কারণে এক সপ্তাহ আগে চিঠি পাওয়ার পর তারা পণ্য আমদানি করছেন না। প্রায় দুই মাস আগে বিষয়টি জানার পর তারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এর জটিলতা নিরসনে এলাকার সংসদ সদস্য, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হলে মন্ত্রীও মেশিন না বসানোর জন্য ডিও দিয়েছিলেন। এর বাইরেও তামাবিল চুনাপাথর, পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ ঢাকায় নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবি উপেক্ষা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ তামাবিলে অটো মেশিন বসিয়েছে।
তামাবিল স্থলবন্দরের আমদানিকারক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি- ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে বোল্ডার, পাথর, চুনাপাথর ও কয়লা আমদানি করা হয়। ভারতীয় আমদানিকৃত পণ্য ডাউকিতে ফিতা দিয়ে পরিমাপ করার ফলে মাটি, কাদামাটি, বালু, আবর্জনা মিশ্রিত থাকে।
এসব মালামাল তামাবিল স্থলবন্দরে অটোমেশিন পদ্ধতিতে স্কেল দিয়ে পরিমাপ করা হলে বাংলাদেশের আমদানিকারকদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ভারতীয় এসব পণ্যের ওজনের তারতম্যজনিত কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হতে হবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। স্কেল দিয়ে পরিমাপ করার ফলে বিভিন্ন সময়ে তামাবিল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত জরিমানা আদায় করে থাকে।
তামাবিল চুনাপাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলী জানিয়েছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ডাউকিতে স্থলবন্দর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে অটোমেশিন স্থাপন করার পর বাংলাদেশ অংশে স্কেল স্থাপন করা হলে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য আমদানি-রপ্তানি কাজ আরও সহজ হবে।
তিনি ভারতের ডাউকিতে অটোমেশিন পদ্ধতি স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত তামাবিল স্থলবন্দরে অটোমেশিন পদ্ধতিতে স্কেল পরিমাপ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবি জানান।
তামাবিল চুনাপাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সহ-সভাপতি মো. জালাল জানিয়েছেন, প্রতিদিন ৮শ’ থেকে ৯ শ’ ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাকে। এখানে অটোমেশিন প্রক্রিয়ার মাধ্যম চালু করা হলে ভারতীয় গাড়ি কমে যাবে। এতে গাড়ি কম প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আমাদের ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এদিকে- তামাবিল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মো. মাহফুজুল ইসলাম ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অটোমেশিন জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানি কাজ বন্ধ রেখেছেন। সরকারি সিদ্ধান্ত মতে তামাবিল স্থলবন্দরে অটোমেশিন পদ্ধতি স্থাপন করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি কাজ বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সরকারের প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।