মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের গোলটেবিল বৈঠক

রিপোর্টার নামঃ
  • বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ, ২০২২
  • ১২০ বার পড়া হয়েছে

অনুসন্ধান নিউজ :: মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সিলেট বিভাগে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের বর্ষব্যাপী চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘পঞ্চাশে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক মার্চ মাসের গোলটেবিল বৈঠকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অভিমত রেখেছেন, বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায় মহান মুক্তিযুদ্ধো ইতিহাস এখনও বিকৃতির বেড়াজাল পুরোপুরি ছিন্ন করে বের হয়ে আসতে পারেনি। তবে গত এক যুগে অনেকটাই মুক্ত হতে পেরেছে। এর মূল কৃতিত্ব বিশেষ করে সিলেটে মূলত ব্যক্তি উদ্যোগ, যেখানে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই বৃহদাকারে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ প্রয়োজন। এটা সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
বুধবার (৩০ মার্চ) রাতে মহানগরীর পূর্ব জিন্দাবাজারে (বারুতখানা) সিলেট জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন, সংগঠনের সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আল আজাদ। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, শিক্ষাবিদ মো. ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক, সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ভবতোষ রায় বর্মণ রানা, বীর মুক্তিযোদ্ধা গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার মো আরশ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছাদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ধীরেন সিংহ, মক্তিযুদ্ধে স্বজনহারা ও গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যাওয়া বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক নিবাস চক্রবর্তী ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক দীপংকর মোহান্ত। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ। আলোচনায় অংশ নেন, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি তাপস দাশ পুরকায়স্থ, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মঈন উদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সদস্য মোহাম্মদ মহসীন, সহসাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রাসেল, জ্যেষ্ঠ সদস্য দেবাশীষ দেবু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল হক শিপু, নির্বাহী সদস্য মিঠু দাস জয়, সদস্য অমিতা সিনহা। এছাড়াও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আবুল হাসনাত অভিমত ব্যক্ত করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতি যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে, বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনারবাংলা হয়ে উঠার লক্ষ্যপানে, ঠিক তখনও একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা ফণা তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিহাস বিকৃত করার চক্রান্ত করে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে পরিচিতি লাভের ধান্ধায় ঘুরে বেড়ায়।
অধ্যক্ষ মো. ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল; কিন্তু বঙ্গবন্ধু নির্ধারিত তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ছিলেন অটল। কারণ তিনি নিশ্চিত ছিলেন, বাঙালির চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ধারণী এই নির্বাচনে কাক্সিক্ষত রায় আসবেই। সেই ঐতিহাসিক রায় তাকে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতার আসনে অধিষ্ঠিত করে।
তিনি বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশে যে কঠিন মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, তার সোনালি ফসল এখন ঘরে তুলছে বাংলাদেশ। একদিন সাম্রাজ্যবাদীরা যে বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিল, ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে অপমানিত করেছিল এখন তারাই বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখার জন্য স্বল্পোন্নত ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশসমূহকে পরামর্শ দিচ্ছে।
বীরপ্রতীক বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্বে বদলে গেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়ে উঠছে। ২০৪১ সালে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুক মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার মো আরশ আলী বলেন, সংগত কারণেই স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এসে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাবনিকাশ করা দরকার। ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তস্নাত এই বাংলাদেশ যদি সর্বক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হয়ে উঠতে না পারে, তাহলে সকল ত্যাগই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, মাঝে মাঝে শঙ্কিত হই। কারণ সাম্প্রদায়িকতা যেভাবে মাথাচারা দিয়ে উঠছে তা যদি এখনই প্রতিহত করা না যায় তাহলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দাঁড়াবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর অতিক্রম করে আজ বাংলাদেশ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা কোনো অংশেই কম গৌরবের নয়। বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে তুলতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন, যখন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায় সন্তোষজনক পর্যায়ে, যখন জাতিসংঘ, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন এবং ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সদস্যপদ অর্জন বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিম-লে ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছে তখনই তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ রায় বর্মণ রানা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত স্রোতে প্রবাহিত হতে থাকে। ২১ বছর পর মানুষ মুক্তকণ্ঠে জয়বাংলা বলতে পারছে।
তিনি বলেন, এখনও সিলেটে রাজাকাররা তৎপর। এদের এখনই প্রতিহত করতে হবে। নইলে এরা এই দেশের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ ধীরেন সিং বলেন, দুস্থ-দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা যেকোনো সভ্য রাষ্ট্রের জন্য অনিবার্য কর্মসূচি; কিন্তু বাংলাদেশে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি।
এখন সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িকতা চলছে। এ ব্যাপারে জনগণ ও রাষ্ট্রকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করতে হবে। সবার ওপরে মানুষ সত্য-এ সত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
একাত্তরে মৃত্যুপুরী থেকে ফিরে আসা নিবাস চক্রবর্তী বুরুঙ্গা গণহত্যার বর্ণনা দিয়ে জানান, শহীদ পরিবারগুলো এখনও নিরাপদ নয়। তাদের জায়গাজমি কেড়ে নেওয়ার পায়তারা চলছে। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী ছাড়া আর কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক দীপঙ্কর মোহান্ত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহের কাজ অত্যন্ত কঠিন। অনেক তথ্য-প্রমাণ হারিয়ে গেছে। তবে আগে মুক্তিযোদ্ধারা মুখ খুলতেননা-এখন মুখ খুলছেন।
তিনি সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহের ব্যাপারে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের প্রস্তার রাখেন।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তাপস দাশ পুরকায়স্থ বলেন, সিলেট অঞ্চলের যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা মোটেই যথেষ্ট নয়।
সভাপতির বক্তব্যে আল আজাদ বলেন, প্রত্যেক পরিবারে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা প্রয়োজন। না হলে নতুন প্রজন্ম নিজেকে, নিজের জাতিকে, নিজের দেশকে জানতে এবং চিনতে পারবেনা।

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2021 Anushondhan News
Developed by Host for Domain