শিরোনাম :
আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে গেলেন ড. ইউনূস সীমান্তে পিঠ দেখাবেন না: বিজিবিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন জায়গায় হাত দেবে না সরকার: ধর্ম উপদেষ্টা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশরাফ ও লায়েকে সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক দলের সংবর্ধনা মোহনা সমাজ কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে মাছুম আহমদ এর স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান, অস্ত্রউদ্ধার বিমান বন্দরে স্বেচ্ছাসেবক দলের আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহীন সংবর্ধীত আজ একমাস! বিপ্লবের ভাষা কি আমরা বুঝতে পেরেছি? পতিত স্বৈরশাসক বাংলাদেশ থেকে কিন্তু খুব বেশি দুরে নয়! শিখা অনির্বাণে প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা ১৬ সেপ্টেম্বর পবিত্র মিলাদুন্নবী (সা.)

আমাদের পানিতে ঘর গেছে, আবার কিসের ঈদ’

রিপোর্টার নামঃ
  • শনিবার, ৯ জুলাই, ২০২২
  • ১২০ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক :: ‘বানের জলে ঘর গিয়েছে। খাওনেরই নিশ্চয়তা নাই। আমাদের আবার কিসের ঈদ’- সাজ্জাদ মিয়ার কণ্ঠে এমন আক্ষেপ।

সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাওয়ের সাজ্জাদ মিয়ার মাটির ঘর বন্যা ভাসিয়ে নিয়েছে। এখন উদ্বাস্তু অবস্থায় প্রতিবেশির ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি বলেন, ঈদ আনন্দের নয়। আমাদের জন্য আরও কষ্টের। ঈদের দিনও বাচ্চাদের মুখে ভালো মন্দ কিছু খাবার তুলে দিতে পারছি না। এটা অনেক বেশি কষ্টের।

সোনাই বেগমের ঘর ভাঙেনি। তবু তিনি ঘরছাড়া। প্রায় ২০দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতা হিসেবে আছেন সোনাই। ২০ দিনেও ঘর থেকে পানি নামেনি।

তিনি বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে গাগাগাদি করে আছি। রান্নার সুযোগ নেই। কোনমতে ইট বসিয়ে একটি চুলা তৈরি করেছি। এখানে ধারাবাহিকভাবে ৫/৬ টি পরিবারের রান্না হয়। ফলে এখানে ভালো মন্দ কিছু রান্নার সুযোগ নেই।

এখানকার আরেক আশ্রিতা আশরাফুল ইসলাম বলেন, এই অবস্থায় তো আমাদের কোন ঈদ নেই। কেউ যদি কোন খাবার উপহার দেয় তাহলে বাচ্চাকাচ্চাদের একটু খাওয়াতে পারতাম। কারণ তারা তো বন্যা-দুর্ভোগ এসব বুঝতে চায় না।

রোববার ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ। কিন্তু সিলেটের বানভাসিদের মধ্যে নেই ঈদেও আনন্দ। বরং অন্য সকলে যখন উৎসবে মেতেছে তখন এখানকার বন্যাদুর্গতরা ব্যস্ত টিকে থাকার সংগ্রামে। জীবন আর জীবিকার দুঃশ্চিন্তায়। ঘর হারিয়ে অনেকেই এখন আশ্রয়হীন। কেউবা হারিয়ে ফেলেছেন ধান, আসবাবপত্র কিংবা কাজের সুযোগ। ভবিষ্যত নিয়েই দুঃশ্চিন্তায় থাকা এই মানুষদের কাছে ঈদেও আলাদা কোন বিশেষত্ব নেই।

পেশায় মৌসুমী শ্রমিক জাফর মিয়া (৩৭)। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ধোপাজান চলতি নদীর তীরে তার বাড়ি। দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভালই চলছিল শ্রমজীবী পরিবারের সংসার। কিন্তু বন্যায় পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সবকিছু। এখন তিনি একেবারে নিঃস্ব।

জাফর মিয়া বললেন, বন্যায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সব পানিত ভাইস্সা গেছে। বানের পাইন্নে বাড়ির ভিটায় খাল অইয়া গেছে। পরের বাড়িত থাকতাছি। ঈদে কিন্তু কোনতা করবার নাই। সাহায্য-সহযোগিতা পাইয়া কোন রকমে চলছি। শুনতাছি ঘর-বাড়ি ঠিক করার লাগি সরকার থাতি আমারারে ১০ হাজার কইরা টেকা দিব। এখনও টেকা-পয়সা পাইছি না। ’

জাফর বলেন, গরু কোরবানি দিতে না পারলেও প্রতিবছর ঈদের সময় মোরগ জবাই করতেন। ঘরে স্ত্রী ভালো মন্দ রান্না করতেন। আর আশপাশের বাড়ি থেকে গরুর মাংস আসতো। কিন্তু এবার কিছুই হবে না বোধহয়।

সরকারি হিসেবে সিলেটে চলমান বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ। আর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অন্তত ৮০ হাজার ঘরবাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে ঘরবাড়ি হারানো ১০ হাজার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে। তবে বেশিরভাগই এখনও ভাঙা ঘর মেরামত করতে পারেননি। এছাড়া পানি নামায় এখনও দুই জেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ।

ফলে এবার লক্ষাধিক মানুষের ঈদ কাটছে আশ্রয়কেন্দ্রে বা অন্যদের ঘরে আশ্রিত হয়ে। অনেকের আবার ভাঙা ঘরে।

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কেই ছাপড়া ঘর তৈরি করে আছেন কাইয়ুম আহমদ। তার ঘরেও পানি। কাইয়ুম বলেন, এবার সড়কেই আমাদের ঈদ। ছাপড়া ঘরে গরু বাছুরের লগে একসাথে থাকি। মাইনষের সাহায্যে চলি। ঈদও এইভাবে চলবে।

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের জামলাবাজ গ্রামের মোছা. শুকুর নেছা বলেন, ‘বন্যার পাইন্নে ঘরের বেড়া, বাশঁ-পালা, দোয়ার সবতাই লইয়া গেছে। আমরার আর ঈদ কিতা, ঘরও চাউল-ডাউল, টেকা-পয়সা কোনতা নাই। আগে খাইয়া বাঁিচ, বাইচ্ছা থাকলে সামনে বছর ঈদ করমু।’

তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের জয়পুর গ্রামের রুহেল আহমদ বলেন, ঘরে কাম (কাজ) ধরাইছি। ঈদের দিনেও কাজ করতে হবে। দ্রুত ঘর মেরামত করতে অইবো। আর কতদিন অন্যের ঘরে থাকতাম। তাই ঈদ আমরার লাগি আলাদা কুনতা নায়। ইতা সুখি মাইনষর লাগি।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,‘ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নি¤œ আয়ের ৫ হাজার পরিবারকে ঈদের আগেই তাদের ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ১০ হাজার করে টাকা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ হতবিলের ৫৫ লক্ষ টাকা এবং ৫০ হাজার ১২২ প্যাকেট দুধ বিতরণ করা হয়েছে।

একই তথ্য জানিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাক মো. মজিবর রহমান বলেন, সিলেটে ক্ষতিগ্রস্ত ৫ হাজার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। বাকীদেরও পুণবার্সন করা হবে। ঈদেও দিন আশ্রয়কেন্দ্রগুওলোতে ভালো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2021 Anushondhan News
Developed by Host for Domain