নিউজ ডেস্ক :: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে রাজধানীতে গণপরিবহনের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বাস পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। অপর দিকে কিছু সংখ্যক বাস চলাচল করলেও ভাড়া দ্বিগুণ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ধানমন্ডি-৩২, আসাদগেট, ফার্মগেটে সরেজমিনে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের চেয়ে সকাল থেকেই বাস অনেক কম। যে সব বাস আসছে, সেগুলোও যাত্রীতে ভরপুর। অপর দিকে মোটরসাইকেলে অ্যাপ ছাড়া রাইড শেয়ার করা চালকরাও বেশি ভাড়া আদায় করছেন।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল রাকিব। সকালে মিরপুরের টোলারবাগ থেকে ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বারে এসেছেন। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, ‘সকালে আসার সময় প্রায় ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর বাস পাই। সেটাতেও চাপাচাপি করে উঠতে হয়েছে। প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে বাসের ভিতরে জায়গা ছিল না। ঝুলে ঝুলে এসেছি। বাসের মধ্যেও সবাই আলোচনা করছিল তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে। আমার কাছ থেকে স্টুডেন্ট ভাড়া নিয়েছে ১০ টাকা। সে হিসেবে মোট ভাড়া নিয়েছে ২০ টাকা।’ এই দূরত্বের সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১০ টাকা। অর্থাৎ দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
আসাদ গেটে কথা হয় আরেক যাত্রী সৈকত দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মহাখালী থেকে ব্যক্তিগত কাজে এসেছেন। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর বাস পান। আসার সময় তার কাছ থেকে ২৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে।’ তবে এই দূরত্বে ভাড়া ১০ টাকা।
বিকাশ পরিবহনের কন্ডাকটর লতিফ ভাড়া বেশি নেওয়া কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এক রাতের মধ্যে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৪ টাকা। আমরা ভাড়া বেশি না নিলে তেলের খরচ বাদ দিয়ে জমার টাকাই উঠবে না। আমাদের পেট আছে না? তেলের দাম কমাতে বলেন। তাহলে আমরা ভাড়া বেশি নেব না।
এর আগে, শুক্রবার রাত ১০টায় দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। ভোক্তা পর্যায়ে লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। দিবাগত রাত ১২টার পর (৬ আগস্ট) থেকে এ নতুন দাম কার্যকর হয়েছে।
গতকাল রাত ১০টায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), ইস্টার্ণ রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)-এ পরিশোধিত এবং আমদানি/ক্রয়কৃত ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের মূল্য সমন্বয় করে ভোক্তা পর্যায়ে এই দাম পুনঃনির্ধারণ করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রসঙ্গক্রমে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জনবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় আমজনতার স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। যতদিন সম্ভব ছিল ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির চিন্তা করেনি। অবস্থার প্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই কিছুটা এডজাস্টমেন্টে যেতে হচ্ছে। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে দিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনঃবিবেচনা করা হবে।