অনুসন্ধান নিউজ :: এ কে আব্দুল মোমেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে থাকার বৈধতা নিয়ে করা রিটটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে এ কে আব্দুল মোমেনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে গত ৫ আগস্ট আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এরশাদ হোসেন রাশেদ। এর জবাব না পেয়ে গত সেপ্টেম্বরে রিটটি করেন তিনি।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী কাজী মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
রোববার শুনানি শেষে আদালত আজ আদেশের জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আদেশ দেওয়া হয়।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত ১৮ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।” এ কথা বলার মধ্য দিয়ে তিনি শপথ ভঙ্গ ও নির্বাচনব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। যে কারণে তাঁর পদে থাকার বৈধতা নিয়ে রিটটি করা হয়। আদালত রিটটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। আবেদনকারীর সঙ্গে আলোচনা করে আপিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
মন্ত্রী যা বলেছিলেন
গত ১৮ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’
এই বক্তব্য রাজনীতিতে তোলপাড় তুললে বিএনপি তার পদত্যাগ দাবি করতে থাকে। আওয়ামী লীগও তার পাশে দাঁড়ায়নি।
পরদিন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই ধরনের অনুরোধ আওয়ামী লীগ করে না, করেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকেও কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
‘ভারত আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কে আবদ্ধ। ভারত আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু। কিন্তু তাই বলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে অনুরোধ করব! এই ধরনের অনুরোধ আওয়ামী লীগ করে না, করেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকেও কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি।’
মোমেনের এই বক্তব্যে ভারতও লজ্জা পাবে উল্লেখ করে কাদের আরও বলেন, ‘যিনি এ কথা বলেছেন সেটি তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। এটি আমাদের সরকারেরও বক্তব্য না, দলেরও বক্তব্য না। এই বক্তব্যের কারণে ভারতও লজ্জা পাবে। কীভাবে আমরা এই কথা বলি! বন্ধু বন্ধু আছে। অহেতুক কথা বলে এটি নষ্ট করবেন না।’
বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দেন মন্ত্রী
চট্টগ্রামের বক্তব্য নিয়ে পরদিন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন মন্ত্রী। সেদিন তিনি কথা বলেন তার ভারত সফরে গিয়ে দেশটির আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথন নিয়ে।
তিনি বলেন, “আসামের মুখ্যমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
“আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘কেন?’
“উনি বললেন, শেখ হাসিনার সেই জিরো টরারেন্স টু টেরোরিজম। এই ঘোষণার পর… আর দ্বিতীয়ত উনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ ক্যান নট বি অ্যা হাব অফ টেরোরিস্ট। এর পরে আসাম, মেঘালয়… সবগুলো জায়গায় আর সন্ত্রাসীর তৎপরতা নেই। সন্ত্রাসীর তৎপরতা না থাকায় তাদের এলাকায় উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়ন হচ্ছে।
“উনি বললেন সন্ত্রাসী না থাকায় আমাদের এলাকায় অনেক উন্নতি হচ্ছে । অনেক হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে। এটা হয়েছে কেবল শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স টু টেরোরিজম ঘোষণার জন্য’।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘আমি ভারত সরকারকে বললাম, আপনার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে শেখ হাসিনা থাকায় স্থিতিশীলতা এসেছে। এই স্থিতিশীলতা আসায় আমাদের দেশেরও মঙ্গল হচ্ছে, আপনার দেশেরও মঙ্গল হচ্ছে। আপনার দেশেও ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হচ্ছে।
‘সুতরাং স্থিতিশীলতা সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট। রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা খুব দরকার। তাতে আপনার দেশেরও মঙ্গল হবে, আমাদের দেশেরও মঙ্গল হবে।’
মোমেন বলেন, ‘আমরা চাই, এই অত্র এলাকায় স্থিতিশীলতা। কোনো ধরনের উশৃঙ্খলতা আমরা চাই না। তা যদি আমরা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে এই সোনালি অধ্যায় যথার্থ হবে।
‘তারপর আমি বলেছি, কিছু কিছু লোক, সময় সময় অনেকগুলো উসকানিমূলক কথা বলে থাকে। আপনাদের দেশেও কিছু দুষ্টু লোক আছে। আমাদের দেশেও দুষ্টু লোক আছে। তারা তিলকে তাল করে। আপনার সরকারের একটা দায়িত্ব হবে এবং আমার সরকারেরও দায়িত্ব হবে তিলকে তাল করার সুযোগ সৃষ্টি করতে না দেয়ার। আমরা যদি এটা করি তাহলে আমাদের সাম্প্রদায়িক সস্প্রীতি থাকবে। আমাদের মধ্যে কোনো অস্থিতিশীলতা, কোনো ধরনের আনসার্টেনেটি থাকবে না।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, আমরা বদ্ধপরিকর, শেখ হাসিনার এই স্থিতিশীলতা থাকুক। এই ব্যাপারে আপনারা সহযোগিতা করলে আমরা খুব খুশি হব।
‘আর আমি বলেছি যে শেখ হাসিনা যদি বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকেন, তাহলে স্থিতিশীলতা থাকে। অস্থিতিশীলতা থাকলেই কেবল আমাদের উন্নতির মশাল নিবে যাবে।’