নিউজ ডেস্ক :: ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে আগামী তিন মাস ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে। বর্তমানে এ পথে ৮ জোড়া ট্রেন চলাচল করে।
ব্যবসা, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নানা কাজে নারায়ণগঞ্জের মানুষ ঢাকায় আসেন। তবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের একটা বড় অংশ অফিসগামী যাত্রী। ঢাকা থেকে অফিস করে তারা নারায়ণগঞ্জে ফিরে যান। এ ছাড়া বাসের বিকল্প হিসেবে নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেনের চাহিদা ব্যাপক।
জানা গেছে, পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে ৩টি পৃথক রেললাইনের নির্মাণকাজ চলমান। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী জানান, পদ্মা রেলসেতু প্রকল্পের আওতায় গেন্ডারিয়া পর্যন্ত অংশে নির্মাণকাজ দ্রুত ও নিরাপদের স্বার্থে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।
১২ দশমিক এক কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলা শুরু হয় ১৮৮৫ সাল থেকে। এই রুটে দৈনিক যাত্রী ৩০ হাজারের বেশি। এদিকে ট্রেন বন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবেই চাপ বাড়বে সড়কপথে। কিন্তু ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। ফলে এই রুটে তীব্র যানজট ও ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে।
করোনার আগে দুটি রেক চলত এই রুটে। এখন চলে একটি। ট্রেনটি দিনে ১৩ বার ঢাকায় আসে। কমলাপুর থেকে আবার ১৩ বার নারায়ণগঞ্জ যায়। গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ‘তুরাগ’ নামে আরেকটি লোকাল ট্রেন চলে।
জানা গেছে, পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদার সিআরইসি গত ২২ নভেম্বর চিঠি দিয়ে জানায়, এ অংশে নির্মাণকাজ দ্রুত ও যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। সাময়িকভাবে অন্তত তিন মাস ১৫ দিন ট্রেন বন্ধ রাখা জরুরি বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি লিখিতভাবে জানিয়েছে। এর পর পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের পক্ষ থেকে রেলওয়ের মহাপরিচালকের সামনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বিষয়টি রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের নজরে এলে তিনি গত মন্ত্রিসভায় অনানুষ্ঠানিকভাবে তা তুলে ধরেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অবহিত হওয়ার পর তিন মাস সময় ট্রেন বন্ধ রাখার বিষয়ে একমত হয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
এর আগে ঠিকাদার এবং প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার প্রস্তাব আসে। কিন্তু প্রস্তুতি ও প্রচারের সুবিধার্থে তিন দিন পিছিয়ে ৪ ডিসেম্বর থেকে কার্যকরের সিদ্ধান্ত আসে। দেশের জনসাধারণকে অবহিত করার পাশাপাশি এ রুটে বিআরটিসির বাস সার্ভিস বাড়ানোর আলোচনা হয়। বেসরকারি বাস মালিকদের সহযোগিতা ও বিআরটিসির একান্ত ভূমিকা ট্রেনের যাত্রীদের সড়কপথে যাতায়াত নির্বিঘœ করতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রেলসূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ৩০ জুনের পর থেকে ওই রুটে ভাঙ্গা পর্যন্ত যেন ট্রেন চলতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়ার মধ্যে দুটি নতুন ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। কিন্তু গেন্ডারিয়া থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি তুলনামূলক কম। ইউটিলিটি শিফটিং এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রেন পরিচালনা সম্ভব নয় বলে কাজের অগ্রগতি কম। তাই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে ট্রেন বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছে ঠিকাদার। এর অংশ হিসেবে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করে দ্রুত কাজটি শেষ করতে চায় তারা। পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের অগ্রগতি সভায় কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেও বিষয়টি উঠে আসে। সব মিলিয়ে সাময়িকভাবে ট্রেন বন্ধ রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
এর আগে রেলপথ সংস্কার ও নির্মাণের স্বার্থে এ রকম ট্রেন বন্ধ রাখার নজির নেই। তবে টঙ্গী-ভৈরব ডাবল লাইনসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে দ্বৈত রুট করতে কিছু সময়ের জন্য ট্রেন বন্ধ রাখার দৃষ্টান্ত আছে। সেটি ঘণ্টার হিসাবে বিবেচ্য। কিন্তু টানা তিন মাস একটি রুটে ট্রেন বন্ধ রাখার দৃষ্টান্ত নিকট-অতীতে নেই বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।