সিলেটে ফের আসছে ‘পরিবহন ধর্মঘট’র ডাক!

রিপোর্টার নামঃ
  • শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩
  • ১৮৬ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক :: গত ৭ জুলাই রাতে সিলেটের জৈন্তাপুরে বাসচাপায় ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনা এখনও প্রশমিত হয়নি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর জৈন্তিয়া ১৭ পরগণা সালিশ সমন্বয় কমিটির আহবানে সিলেট-তামাবিল-জাফলং, সিলেট-কানাইঘাট ও সিলেট-গোয়াইনঘাট সড়কে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রতিবাদে জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন আবারও জেলাজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিতে পারে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি ময়নুল ইসলাম।

তিনি জানান- আগামী সোমবার (১৭ জুলাই) ভোর থেকে এ কর্মবিরতি পালন করতে পারেন পরিবহন শ্রমিকরা।
গত ৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বাসের ধাক্কায় একটি ইজিবাইকের (টমটম) পাঁচ যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন কয়েকজন।

ঘটনার পরদিন (শনিবার) রাতে দরবস্ত বাজার মসজিদে সিলেটের বৃহত্তর জৈন্তাপুর ১৭ পরগনার সালিশ সমন্বয় কমিটি জরুরি বৈঠক করে। ওই বৈঠকে সিলেট-তামাবিল সড়কে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের ছাঁটাইয়ের দাবি জানানো হয়। ছাঁটাইয়ের আগ পর্যন্ত ওই সড়কে বাস-মিনিবাস চলাচল করতে না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (৯ জুলাই) সকাল থেকে বৃহত্তর জৈন্তাপুরের বাসিন্দারা সিলেট-তামাবিল সড়কে বাস চলাচলে বাধা দেন। এতে নেতৃত্ব দেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদ। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেন জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। ওইদিন বিকেলে তারা বৈঠক করে সিলেট-তামাবিল সড়কে সোমবার (১০ জুলাই) ভোর থেকে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। এসময় শ্রমিক নেতারা আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

সোম ও মঙ্গলবার এই দুই দিন সিলেট-তামাবিল সড়কে কর্মবিরতি পালন করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এই দুই দিনে তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় বুধবার ভোর থেকে সিলেট জেলাজুড়ে তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেন। তবে ওই দিন রাতে সিলেট জেলা প্রশাসক মজিবর রহমানের আহবানে বৈঠকে বসে তারা কর্মবিরতি ঘোষণা প্রত্যাহার করেন। ওই বৈঠকে বৃহত্তর জৈন্তিয়া ১৭ পরগণা সালিশ সমন্বয় কমিটির প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কামাল আহমেদ। বৈঠকে পরিবহন শ্রমিক নেতারা দরবস্তে দুর্ঘটনায় হতাহতদের বাড়ি গিয়ে সমবেদনা জানানো ও সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে শনিবার পর্যন্ত তারা এমন না করায় জৈন্তিয়া ১৭ পরগণা সালিশ সমন্বয় কমিটির আহবানে সিলেট-তামাবিল-জাফলং, সিলেট-কানাইঘাট ও সিলেট-গোয়াইনঘাট সড়কে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদ বলেন- ‘প্রথমদিকে আমাদের দাবি ছিলো ৩টি। ৭ জুলাইয়ের দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া ও আহতদের সহযোগিতা করা, সিলেট-তামাবিল সড়ক থেকে লাইসেন্সবিহীন-অদক্ষ বাস চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি প্রত্যাহার এবং ১৭ পরগনার কাছে ময়নুল ও মালিক সমিতির প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া। তবে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আহ্বানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমরা শুধু প্রথম দুটি দাবি পেশ করি এবং পরিবহন শ্রমিক নেতারা তা মেনে নেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেননি। ফলে আমরা সিলেট-তামাবিল-জাফলং, সিলেট-কানাইঘাট ও সিলেট-গোয়াইনঘাট সড়কে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস বর্জন অব্যাহত রেখেছি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার আমরা বৈঠক করে আমাদের এই দুই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেই।’

তবে পরিবহন শ্রমিক নেতারা ৭ জুলাইয়ের দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো আগামী সোমবার (১৭ জুলাই) থেকে সিলেট জেলার সব সড়কে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন- ‘সিলেট-তামাবিল সড়কে বাস-মিনিবাস যাত্রীরা বর্জন করছেন। সিলেট থেকে আমাদের বাসগুলো যাত্রী নিয়ে গেলে দরবস্ত বাজারে যাওয়ামাত্র স্থানীয়রা গাড়ি আটকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন। এর প্রতিবাদে আমরা আগামী সোমবার থেকে জেলাজুড়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দিতে পারি। তবে আগামীকাল (রবিবার) আমাদের একটি বৈঠক রয়েছে। এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও উপস্থিত থাকবেন। এই বৈঠক পর আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’

 

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2021 Anushondhan News
Developed by Host for Domain