সিলেটে দেড় মাসে সড়কে ঝরল ৬৮ তাজা প্রাণ, দায় কার?

রিপোর্টার নামঃ
  • রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩
  • ৬১ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক :: সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। গত দেড় মাসে সিলেট বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অন্তত ৬৮ জন। এর মধ্যে গত সর্বশেষ শুক্রবার সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জ পাবলিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় প্রীতম নামের পাঁচ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আর তার ঠিক আগের দিন বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সিলেট-কোম্পানিগঞ্জের বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ সাতজন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তীব্র গতি, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেক আর ভাঙাচোরা সড়কের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটে ৭ জুন (বুধবার) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। দুই ট্রাকের সংঘর্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ১১ জন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরো ৪ জন। নিহত সবাই নির্মাণশ্রমিক ছিলেন।

সিলেট নগরের আম্বরখানা বড়বাজার থেকে পিকআপে করে প্রায় ৩০ জন নির্মাণশ্রমিক (নারীসহ) একটি নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদ ঢালাই কাজে যোগ দিতে জেলার ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুরে যাচ্ছিলেন। বুধবার (৭ জুন) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর এলাকায় পৌঁছালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী মালবাহী ট্রাকের সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় প্রত্যেক পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে প্রদান করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এছাড়া আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

দুর্ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই ঘটছে ভোরে বা সকালে। তবে হাইওয়ে পুলিশ বলছে, অদক্ষ চালকদের কারণে ঘটছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। তবে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে এসব বেপরোয়া চালক ও বাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। আর সড়কে মুত্যুর সংখ্যার সবচেয়ে বেশী ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। এই মহাসড়কটি যেন মৃত্যুর বিভীষিকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চালকদের অতিরিক্ত ডিউটি ও আয় করার প্রবণতায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। ভাঙাচোরা ও ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, ভুয়া লাইসেন্সধারী চালক, গাড়ির অতিরিক্ত গতি, ওভার টেকিং, নিয়ম না মানার প্রবণতা এবং জনসচেতনতার অভাবে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া যানজটে পড়ে সময় ক্ষেপণ হওয়ায় পরবর্তীতে দ্রুত চালিয়ে তা পুষিয়ে নেয়ার মানসিকতাই আর চালকদের বেসামাল আচরণের কারণে ঘটছে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, গত জুন মাসে সিলেট বিভাগে ৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে প্রাণহানি হয়েছে ৪৬ জনের এবং আহত হয়েছেন ১শ ১৪ জন। এদিকে, গত শুক্রবার পর্যন্ত চলতি জুলাই মাসের তথ্য বিশ্লেষনে দেখা যায়, বিভাগের ৪ জেলায় এ মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন শিশু রয়েছেন এবং একজন ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান।

এছাড়া চলতি মাসের ৮ তারিখে সিলেট- তামাবিল সড়কের দরবস্ত এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বাস-ইজিবাইক সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হন।

জানা যায়, সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া জাফলংগামী একটি বাস রাত ১০টার দিকে দরবস্ত এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ইজিবাইককে চাপা দেয়। এতে ইজিবাইকে থাকা ৭ যাত্রীর মধ্যে ৫ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ দুর্ঘটনায় কয়েকজন গুরুতর আহত হন।

হাইওয়ে পুলিশ সিলেট রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‌সিলেটের অনেক স্থানে গাড়ির ছাদে কিংবা ভ্যানে যাত্রী বহন করা হয় যা নিষিদ্ধ। আমরা এ ধরণের যাত্রী পরিবহন গাড়ী হাইওয়েতে চলাচল করতে দেইনা। দেখা গেছে বেশীর ভাগ ঘটনা বেশি ঘটে ঈদ, উৎসব অথবা পিকনিকে যাতায়াতে। এছাড়া সংকীর্ণ রাস্তা, বেপরোয়া গতি আর চালকদের অসচেতনতার বিষয়টি তিনি উল্লেখ্য করেন।

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2021 Anushondhan News
Developed by Host for Domain