নিউজ ডেস্ক :: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এবার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিল নির্বাচন চলাকালীন ও পরে সম্ভাব্য নির্বাচনী সহিংসতা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশে আসা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)। তাদের টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশন (টিএএম) চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
শনিবার (১৬ মার্চ) আইআরআই তাদের ওয়েবসাইটে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনের সময়কাল, প্রচারের সময়কাল, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের আগের ও পরের নির্বাচনগুলোর তুলনায় সরাসরি ও অনলাইনে সহিংসতা কম হয়েছে। এর অন্যতম কারণ দেশব্যাপী কার্যকর নির্বাচনী প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি এবং দেশের নিরাপত্তায় সরকারের বাড়তি নজর দেওয়ায় এটি ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারির নির্বাচনের গুণগত মান যেসব ঘটনার কারণে ক্ষুণ্ণ হয়েছে তা হলো- রাষ্ট্র, শাসক দল এবং বিরোধীদের সহিংসতা, সেইসাথে প্রাক-নির্বাচন পরিবেশের চিহ্নিত শূন্য-সমষ্টির রাজনীতি, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সহিংসতা, নাগরিক স্বাধীনতার সংকোচন, এবং বাক স্বাধীনতা ও সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতার অবনতি।
এনডিআইয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মনপ্রীত সিং আনন্দ বলেন, এই প্রতিবেদনটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আরও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের একটি মূল্যবান রোডম্যাপ হিসেবে অবদান রাখবে। অহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল, সরকার এবং নাগরিক সমাজসহ সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলজুড়ে নেতাদের নির্বাচনী রাজনীতির নিয়ম, অনুশীলন এবং নিয়মগুলোর সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে।’
আইআরআইর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জোহানা কাও বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা নাগরিকদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। বাংলাদেশের নির্বাচনকে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক করতে হলে সব পক্ষকে অহিংস রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
এই মিশনটি একটি যৌথ প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন মিশন (পিইএএম) অনুসরণ করে যা এনডিআই এবং আইআরআই ২০২৩ সালের ৮ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত পরিচালনা করেছিল। পিইএএম-এর পর্যবেক্ষণে কারিগরি মূল্যায়নের কাঠামো ও পরিধি সম্পর্কে অবহিত করা হয়, যা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এবং ২০০৫ সালে জাতিসংঘে অনুমোদিত আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নীতিমালার ঘোষণাপত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৭ মার্চ নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কারিগরি দল। ৩৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে জোটের মতামতের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি পরিবর্তনে ২১টি সুপারিশও করে ২৭ দেশের এই জোট।
ইইউর ইলেকশন অবজারভেশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি সাপোর্টের (ইওডিএস) ওয়েবসাইটে ৩৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ছিল না। একদিকে যেমন নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার ছিল না, অন্যদিকে আন্দোলন করার অবাধ সুযোগও সীমিত করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গণগ্রেপ্তারের কারণে বিরোধী দল ব্যস্ত ছিল আদালত পাড়ায়। রাজনৈতিক দলগুলোর আসন ভাগাভাগি চুক্তি এবং আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী ও দলের সঙ্গে যুক্ত ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে ভোটারদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেওয়ারও সুযোগ ছিল না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যথেষ্ট সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করতে ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচনে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক ছিল না উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স চুরির অভিযোগ ছাড়াও পাওয়া গেছে বিচ্ছিন্ন সহিংসতার খবরও।