অনুসন্ধান ডেস্ক :: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা একটা ঘোষণা দিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে পারেন। দেশে সংস্কার জরুরি, সংস্কার যদি শেষ না হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে, এর বাইরে যাবে না।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাইক্কা বিল মৎস্য অভয়াশ্রম-সংশ্লিষ্ট সুফলভোগীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি।
দেশের আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে তিনি বলেন, একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, তরুণদের বিশাল একটা আন্দোলনের পরে দেশে একটা পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সবকিছু তো পরিবর্তন হয়নি। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা অনেকেই এখন সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। এটার কারণেই দেশে নানা রকমের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। যেসব ঘটনা ঘটছে এটা সাময়িক, দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। আমরা দেশকে সংস্কার করে, দেশের যেগুলো ক্ষতি হয়েছে সেগুলো ঠিক করে যাতে নির্বাচন দিয়ে যেতে পারি সেই পরিস্থিতিই আমরা তৈরি করতে চাই। যারা ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করছেন তারা রাজনৈতিকভাবে ক্ষতি করছেন। এখানে উসকানিমূলক কিছু বিষয়ে থাকায় ঘটনাগুলোও ঘটছে।
মতবিনিময় সভায় মাছের আসা–যাওয়া বন্ধে বিলের যত্রতত্র দেওয়া জালের ব্যবহার বন্ধ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিলে পর্যটক নিরুৎসাহিত করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সকালে শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশগ্রহণের আগে মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বাইক্কা বিলের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
মতবিনিময় সভায় ফরিদা আখতার বলেন, ‘এখানে এসে একটা কথা শুনে কষ্ট লাগল, হাওরে নেট (জাল) দিয়ে মাছের আসা-যাওয়া বন্ধ করা হয়। আপনারা মাছকে বাইক্কা বিল থেকে যেতে দিচ্ছেন না, ফিরতে দিচ্ছেন না; এটা অন্যায়। বাইক্কা বিলে সব ধরনের নেটের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি বাইক্কা বিলে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করা হবে।’
বাইক্কা বিলকে মাছের বীজতলা উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বাইক্কা বিলে যে পানি থাকে, সেখানে মাছের প্রজনন ঘটে। বর্ষায় সেই মাছ বাইক্কা বিল হয়ে ১৩২টি বিলে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় মৎসজীবীরা বিলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের কারণে যত্রতত্র বাঁধ ও জালের ব্যবহার করায় বিলের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটছে। বিলের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য স্থানীয় প্রকৃত মৎস্যজীবী ছাড়া কাউকে ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হবে না। তিনি বাইক্কা বিলে মাছের প্রজনন বাড়াতে চিহ্নিত এলাকায় খননকাজ চালানোর আশ্বাস দেন।
ফরিদা আখতার আরও বলেন, বাইক্কা বিলের আশপাশে জলা-জঙ্গলে বৈচিত্র্যময় পাখির বসবাস। পর্যটকদের পদচারণে বিলের মাছ, পাখি ও জীব–প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পর্যটকদের চলাফেরা, হইচই পাখিদের আতঙ্কিত করে, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তাঁরা সেখানে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন।
মৎস্য উপদেষ্টা আরও বলেন, বিদেশি অর্থায়নে প্রকল্প করার চিন্তা করবেন না। কারণ, বিদেশি অর্থ একপর্যায়ে শেষ হবেই। তারা সারা বছর অর্থ দিক, এটাও তাঁরা চাইতে পারেন না। এ জন্য নিজেদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। হাওরের বিভিন্ন কাজে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ নিজেরাই রাজস্ব খাত থেকে বরাদ্দ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে ফরিদা আখতার বলেন, ‘একটি ছোট দাবি থেকে তরুণেরা দেশের বৈষম্য দূর করতে চলে গেছে। এই কাজ করতে গিয়ে তারা প্রাণ দিয়েছে, হাজার হাজার তরুণ আহত হয়েছে। তাদের কথা আমাদের স্মরণ রাখতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। দেশের তরুণদের জন্য আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে।’
মতবিনিময় সভায় মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুর রউফ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়া হায়দার চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হবীর, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।