অনুসন্ধান ডেস্ক ::: সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে দুটি নতুন ট্রেন চালুসহ আট দফা দাবিতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া জংশন স্টেশনে রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি পূরণের আশ্বাসে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর বেলা দুইটার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী নেতারা।
এর আগে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দলের একটি বৈঠক হয়। অবরোধের কারণে বিভিন্ন রেল স্টেশনে কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়ে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ‘আট দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ সংগঠনের মূখ্য সমন্বয়ক ও কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম আতিকুর রহমান।
তিনি বলেন, বৈঠকে রেলের কর্মকর্তারা সব আন্তনগর ট্রেনে দুটি করে অতিরিক্ত বগি সংযোজন ও ট্রেনে উন্নত ইঞ্জিন স্থাপনের কথা বলেছেন। আজমপুর স্টেশনের পর অন্য স্টেশনে আন্তনগর পারাবত ও কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন। কর্মকর্তারা বলেছেন, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বন্ধ রেলস্টেশন চালু ও সিলেট-আখাউড়া সেকশনে দুটি লোকাল ট্রেন চালু করা হবে। ৭২ ঘন্টার মধ্যে কুলাউড়া থেকে সিলেট রেল স্টেশন পর্যন্ত আন্তনগর পারাবত, উপবন ও কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে ৪০ আসনবিশিষ্ট একটি করে বগি দেওয়া হবে।
রেলের কর্মকর্তারা বলেছেন, সিলেট-আখাউড়া রেলপথ সংস্কারে এক হাজার ৭৩৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। চলতি নভেম্বর মাসে কাজের দরপত্র আহ্বান করা হবে। এ ছাড়া ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে দুটি নতুন ট্রেন চালু হবে।
আন্দোলনকারীদের সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচি সফল করতে সকাল থেকেই লোকজন লাল পতাকা হাতে নিয়ে কুলাউড়া রেলস্টেশনে জড়ো হতে থাকেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে যোগ দেন তাঁরা।
এ সময় কুলাউড়ায় আট দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক এম আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া উপজেলা) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবেদ রাজা, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী সাহেদ আলীসহ অনেকে।
একপর্যায়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা জানান। তিনি বলেন, ‘সিলেট বিভাগ রেল, সড়ক যোগাযোগসহ নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে কুলাউড়ার পাশাপাশি সিলেটের মানুষও জেগে উঠেছেন। রেলের আট দফা দাবি যৌক্তিক। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছাড়া যাবে না।’
আট দফা দাবিগুলো হলো—ঢাকা-সিলেট রেলপথে অনুমোদিত টাঙ্গুয়ার এক্সপ্রেস দ্রুত চালুসহ সিলেট-ঢাকা, সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে দুটি স্পেশাল ট্রেন চালু; আখাউড়া-সিলেট রেলপথ সংস্কার ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ; আখাউড়া-সিলেট সেকশনে একটি লোকাল ট্রেন চালু; আখাউড়া-সিলেট সেকশনে সব বন্ধ স্টেশন চালু; কুলাউড়া জংশন ও শ্রীমঙ্গল স্টেশনে বরাদ্দকৃত আসনসংখ্যা বৃদ্ধি; সিলেট-ঢাকাগামী আন্তনগর কালনী ও পারাবত ট্রেনের আযমপুরের পর ঢাকা অভিমুখী সব স্টেশনের যাত্রাবিরতি প্রত্যাহার; সিলেটের সঙ্গে চলাচলকারী ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় রোধে ত্রুটিমুক্ত ইঞ্জিন যুক্ত এবং যাত্রীদের চাহিদা অনুপাতে প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা।
কুলাউড়া স্টেশনের স্টেশনমাস্টার রোমান আহমদ জানান, অবরোধের কারণে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন শায়েস্তাগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল স্টেশনে কিছু সময় আটকা পড়ে। অবরোধ শুরুর আগে সকাল সাড়ে সাতটায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন কুলাউড়া স্টেশন ছেড়ে যায়।
শ্রীমঙ্গলে বিক্ষোভ
শ্রীমঙ্গলে আট দফা দাবিতে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন। এ সময় তাঁরা ‘সিলেট বিভাগের ট্রেন যোগাযোগ উন্নয়ন চাই’, ‘নতুন ট্রেন চালু করো’, ‘টিকিট সংকটের সমাধান করো’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নিলে ট্রেনটি সিলেটের উদ্দেশে রওনা দেয়।
কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন শ্রীমঙ্গল ট্রেন অবরোধ কর্মসূচির আহ্বায়ক কাওসার ইকবাল, সদস্যসচিব মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সিলেট-ঢাকা রেলপথে দ্রুতগামী ট্রেনের অভাব, পর্যাপ্ত টিকিট না পাওয়া, ট্রেনের ঘনঘন বিলম্ব এবং পুরোনো বগি ব্যবহারের কারণে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে আছেন। অনেক জায়গায় রেললাইন বেহাল অবস্থায় আছে। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, ট্রেন লাইনচ্যুত হচ্ছে। রেলপথ সংস্কার না হলে একসময় পুরো অঞ্চল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।