অনুসন্ধান ডেস্ক ::: শতাব্দীর আলোকিত সূর্য সন্তান, একুশে পদক প্রাপ্ত, কিংবদন্তী বৌদ্ধ মনীষা,বৌদ্ধ সমাজ গগনের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, সমাজ সংস্কারক, বহু জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, অনন্তগুণ সম্পন্ন, শীলবান, প্রজ্ঞাবান, পরকল্যাণে নিবিদিত, অনাথপিতা, একুশে পদকপ্রাপ্ত, বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু, জ্ঞানভানক, মহাসদ্ধর্মজ্যোতিকাধ্বজ, অগ্গমহাপণ্ডিত,শাসন শোভন মহামান্য সংঘরাজ ড.জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির’র মহাজীবনের অবসান। বৃহস্পতিবার ১৩ নভেম্বর বিকাল ৪ টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রামের এভার কেয়ার হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। অনিচ্চা বত্ সংখারা।
যুগে যুগে কালে কালে আমাদের সমাজ পরিমণ্ডলে এমন কিছু পুণ্য পুরুষের জন্ম হয় যাঁদের মেধা, মনন, প্রজ্ঞা, শ্রম, আত্মত্যাগ, চিন্তা চেতনায়- দেশ, সমাজ, জাতি, সদ্ধর্ম, আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। তেমনি এক কালজয়ী মহাপুরুষ, মহাজীবন, শতাব্দীর আলোকিত সূর্য, মহামান্য ত্রয়োদশ সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির।
প্রকৃতির অপরূপ শোভায় সুশোভিত রাউজান উপজেলাস্থ পুণ্যভূমি উত্তর গুজরা (ডোমখালী) গ্রামে ১৯২৫ সালের ১৮ নভেম্বর এক আলো ঝলমল পুণ্য লগনে পিতা প্রেম লাল বডুয়া ও মাতা মেনেকা রাণী বড়ুয়ার ঘর আলোকিত করে জন্ম নিয়েছিলেন আলোর নন্দন লোকনাথ বড়ুয়া। সেদিনের লোকনাথ কিশোর বয়সে মাতাকে হারিয়ে তাঁর মামা পশ্চিম বিনাজুরী গ্রামের কীর্তিমান সংঘ মনীষা ভদন্ত সারানন্দ মহাস্থবির এর সার্বিক সহযোগিতায় ১৯৪৪ সালে গৌরবদীপ্ত সংঘিক ব্যক্তিত্ব, উপ সংঘরাজ ভদন্ত গুণালঙ্কার মহাস্থবির এর নিকট হাটহাজারীর জোবরা গ্রামে শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষা নেন। পাঁচ বছর পর শ্রামণ্য ধর্মের ইতি টেনে ১৯৪৯ সালে গুরু ভদন্ত গুণালঙ্কার মহাস্থবিরের উপাধ্যায়ত্বে দুর্লভ উপসম্পদা লাভ করেন।
উত্তর গুজরা ডোমখালী গ্রামের সেদিনের সেই লোকনাথ আজকে বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু, বৌদ্ধ বিশ্বের বর্ষীয়ান কিংবদন্তী সাংঘিক ব্যক্তিত্ব, একুশে পদকপ্রাপ্ত মহামান্য সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির। এই মহানুভব সংঘ মনীষার ৮০ বছরের প্রব্রজিত জীবন যেন এক বর্ণাঢ্য ইতিহাস। সুদীর্ঘকাল বৌদ্ধ সমাজ গগনকে তিনি তাঁর মেধা, মনন, প্রজ্ঞা, শ্রম, আত্মত্যাগ, শীল, সমাধি, প্রজ্ঞার আলোয় উদ্ভাসিত করে চলেছেন।
৮০ বছরের ভিক্ষুত্ব জীবনে বৃহত্তর বৌদ্ধ সমাজকে তিনি অকাতরে শুধু দিয়ে গেছেন। পূজনীয় ত্রয়োদশ সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবিরের দীর্ঘ কর্মময় জীবনে অনেক জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছেন। তাঁর ভক্তবৃন্দ আগামী ১৮ নভেম্বর তাঁর শতবছর পূর্তি উপলক্ষে বিনাজুরী শ্মশান বিহারে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করলেও ঠিক পাঁচদিন আগেই সমগ্র বৌদ্ধ সমাজকে শোক সাগরে ভাসিয়ে মহাপ্রয়াণ লাভ করেন।।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ যুব পরিষদ সিলেট অঞ্চল বিনম্র শ্রদ্ধায় গভীর শোক প্রকাশ করেন।