অনুসন্ধান ডেস্ক ::: সিলেট মহানগরীতে আকস্মিক ভূমিকম্প মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি ও করণীয় নির্ধারণে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বিকেলে নগর ভবনে আয়োজিত এ সভায় বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধি ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
সভায় নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এলাকার বাসিন্দাদের জন্য আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, ঝুঁকি নিরূপণের কার্যকর পদ্ধতি এবং ভূমিক্ষয় প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সিসিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দ্রুত সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবনগুলোর কাঠামোগত নিরাপত্তা যাচাই, ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল চিহ্নিতকরণ, উদ্ধারকর্মীদের প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি এবং দুর্যোগ-পরবর্তী জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
সভায় আরও বলা হয়, নগরবাসীর সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মহড়া, গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের কাজ চলমান রয়েছে। ভূমিকম্প পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের সমন্বয় জোরদার করার ওপরও জোর দেন বক্তারা।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজা-ই রাফিন সরকার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, যেহেতু ভূমিকম্প ঠেকানোর উপায় নেই, তাই ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নগরবাসীকে সচেতন করতে হবে। উদ্ধারকাজে সম্পৃক্ত সব সংস্থার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনীয় সবকিছু প্রস্তুত রাখতে হবে।
সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী বলেন, নগরবাসীকে নিরাপদ রাখতে ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত সব ভবন ভেঙ্গে ফেলা হবে। আরও কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে কিনা তা যাচাই করতে নতুন করে এসেসমেন্ট করা হবে। উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে সেগুলোকে ভাঙ্গা হবে। জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি উদ্ধার কাজের জন্য আরও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে তুলে ধরা হবে। নিজেদের নিরাপদ রাখতে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করতে তিনি নগরবাসীকে অনুরোধ জানান।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম ভূমিকম্প হলে যাতে মানুষ নিরাপদ স্থানে যেতে পারে সেজন্য নিরাপদ বৃহৎ খালি জায়গা প্রস্তুত রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি উপস্থিত সবাইকে আশার বাণী শুনিয়ে বলেন, গত একযুগে সিলেট সিটি কর্পোরেশন একটিও দুর্বল বিল্ডিং অনুমোদন দেয়নি। বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করলে ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজা-ই রাফিন সরকার বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা আরও বাড়াতে আমরা সব দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমাদের অনেক যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলোতে প্রস্তুত রাখছি, যাতে সময়মতো হাতের কাছে পাওয়া যায়। দুর্যোগকবলিতদের উদ্ধারের জন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করব।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, দুর্যোগের সময় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, স্বেচ্ছাসেবী পাওয়া যায় না। তাই এ ব্যাপারে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। পুরোনো স্বেচ্ছাসেকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি নতুন নতুন স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করতে হবে। যন্ত্রপাতির ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে, যাতে যথাসময়ে সেগুলোকে কাজে লাগানো যায়।
সভায় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, জালালাবাদ গ্যাস, আনসার ভিডিপি, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, ইসলামিক রিলিফ, বিএনসিসি, স্কাউট, গার্লস গাইড প্রতিনিধি সহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।