নিউজ ডেস্ক :: সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে মধ্যযুগীয় কায়দায় যুবককে হত্যার ঘটনায় ১০জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরো ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে তাহিরপুর উপজেলা আ. লীগের সহসভাপতি মোশারফ হোসেন তালুকদারকে।
মঙ্গলবার(২৫এপ্রিল)রাতে নিহতের পিতা মজিবুর রহমানবাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে তাহিরপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন।
এর পূর্বে গত ২৪ এপ্রিল উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামে রাত ১১টায় হত্যার ঘটনাটি ঘটে।
মামলার আসামিরা হলেন- উপজেলা আ,লীগের সহসভাপতি মোশাররফ হোসেন তালুকদার(৭০), মোশারফের ছোট ভাই মহিনুর তালুকদার(৫০), মোশাহিদ তালুকদার (৪৫), মোশারফের ছেলে মোনায়েম হোসেন রাজু(৩২), একই গ্রামের মোশারফের ফুফাতো ভাই নুরুজ আলী(৫৫), তার ছেলে কাহার মিয়া(৩৮) ও একই গ্রামের রাফি(২৯), শিপলু মিয়া(২৬)সহ ১০জন ও অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে সরেজমিনে অভিযুক্ত মোশারফের বাড়িতে গেলে সেখানে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি এবং ঘরবাড়ি তালা অবস্থায় দেখা গেছে। শুধু তাই নয় আশপাশের ২০টি বাড়ির পুরুষ ও নারী কেউ নেই। ঘরবাড়ি তালা দিয়ে আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে চলেগেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে মোশারফের মোবাইল ফোন নাম্বরে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে নিহতের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। পুত্র শোকে মা বার বার মুছা যাচ্ছেন। আত্মীয় স্বজনরা আহাজারী করছেন। পিতা নির্বাক হয়ে অপেক্ষায় আছেন কখন নিহত পুত্রের লাশ আসবে বাড়িতে। পাড়া প্রতিবেশী সবাই অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে সাকিবকে শেষ বারের মত এক পলক দেখার জন্য।
নিহতের পিতা মুজিবুর মিয়া জানান, সোমবার রাত ১১টার দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘাগটিয়া গ্রামের রাফি, রাজ, নুরুজ আলী ও তার ছেলে কাহার মিয়া, মহিনুর, মোশাহিদসহ অন্তত ১০/১২জন ও তার বাহিনী মিলে আমার ছেলেকে জোরপূর্বক ধরে মোশাররফের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে মোশারফ এর নির্দেশে তারা সবাই মিলে আমার ছেলেকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে ও নক উপড়ে তুলে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। খবর পেয়ে আমি রাত ১টার দিকে মোশাররফের বাড়িতে গেলে তারা আমার উপরও আক্রমণ করে। পরে আত্মরক্ষার্থে আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসি।
মঙ্গলবার সকালে পুলিশ আমাকে জানায়, আমার ছেলেকে তাহিরপুর হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। সেখানে গিয়ে আমার ছেলে সাকিবকে না পেয়ে পরে জানলাম সুনামগঞ্জ হাসপাতালে আছে। সেখানে গিয়েও ছেলের কোনো খোঁজ পেলাম না। পরে শুনলাম সিলেট ওসমানি হাসপাতালে রয়েছে। সেখানে গিয়ে ছেলেকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।
তিনি আরো জানান, দুই বছর আগেও মোশারফের লোকজন আমার ঘড়বাড়ি পেট্রোল দিয়ে জালিয়ে দিয়েছিল। এবং আমার ছেলেকে খুপিয়ে গুরুতর আহত করে। আমি আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইফতেখার হোসেন জানান, মামলায় জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে। প্রাথমিক তদন্তে ওই যুবককে পিটিয়ে চার হাত-পা ভেঙে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।