নিউজ ডেস্ক :: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন আন্দোলরত শিক্ষর্থীরা। রবিবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যারাত সাড়ে ৭ দিকে এ কাণ্ড ঘটান তারা।
শাবি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত বুধবার থেকে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। রবিবার (২৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছেন। এসময় তারা ঘোষণা দেন- পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া বাইরের কেউ আর উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। এছাড়াও উপাচার্যের বাসভবনের সামনের রাস্তায় অনশনরত শিক্ষার্থীরা দুটি খাট ফেলে সেখানে রাত কাটানোর প্রস্তুতি নেন।
পরে সন্ধ্যারাত সাড়ে ৭টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন আন্দোলরত শিক্ষর্থীরা। এ রিপোর্ট লেখা (রাত ৮টা) পর্যন্ত তারা পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে রবিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে প্রেস ব্রিফিং করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে ভার্চুয়ালি আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রেস ব্রিফিংকালে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, গত ১৬ জানুয়ারি শাবিপ্রবি উপাচার্যকে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট বডির পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রীরা আইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করে। অবরোধের মাত্র ২ ঘণ্টার মাথায় সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে অহংকার ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে উপাচার্যের নির্দেশে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলা সংঘটিত হয়। যেখানে নিরীহ-নিরপরাধ ও নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের দমন করতে (এজাহার অনুযায়ী) ১১ রাউন্ড কার্তুজ, ২ রাউন্ড শিসা কার্তুজ, ৩১ রাউন্ড শর্টগানের গুলি এবং ২১টি হেন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ।
এর প্রতিবাদে বুধবার বিকাল থেকে এখন পর্যন্ত অনশনকারী শিক্ষার্থীদের অনশনের ৯৬ ঘন্টা অর্থাৎ- ৪ দিন পেরিয়ে গেছে। তারা ধীরে ধীরে সুনিশ্চিত মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে। তবুও প্রাণের মায়া ত্যাগ করে তারা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। আগের ২৩ জনের সঙ্গে আরও ৪ জন যুক্ত হয়েছেন অনশনে।
প্রেস ব্রিফিংকালে ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, এমতাবস্থায় এ সংকট নিরসনে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আমাদের প্রতিনিধি দল গতরাত ১ টায় ভিডিও কলের মাধ্যমে আলােচনায় অংশ নেয়। সেখানে উপাচার্যের পদত্যাগ সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট কোনো কথা দেওয়া হয়নি। যেহেতু আমাদের অনশণকারী শিক্ষার্থীদের রেখে আমরা ঢাকা যেতে মানসিক ও দৈহিকভাবে অপরাগ, তাই আমরা ভার্চুয়ালি যেকোনাে মাধ্যমে সকল আলােচনার জন্য সব সময় প্রস্তুত। এই প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে মাননীয় মন্ত্রীকে এ কথা জানিয়ে দিলাম।
উল্লেখ্য, শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু হয় ১৩ জানুয়ারি দিনগত রাতে। ওই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। পরবর্তীতে শাবির পদত্যাগের দাবিতে এক দফায় রূপ নেয় সেই আন্দোলন।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত বুধবার থেকে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। তবে একজনের বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি বাড়ি চলে যান। পরে শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাতে ২৩ জনের সঙ্গে আরও ৩ শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন।