অনুসন্ধান ডেস্ক ::: বৃহত্তর সিলেটের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংগঠন ‘সৃজনঘর’র সিগনেচার প্রোগ্রাম তারুণ্যের মাহফিল-এর তৃতীয় সিজন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিলেট মহানগরের আমান উল্লাহ কনভেনশন সেন্টারে শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মোট ৪টি সেশনে তরুণদের জন্য বিশেষায়িত ব্যতিক্রমধর্মী এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেট মৌলভীবাজার সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন কলেজ, ইউনিভার্সিটি ও মাদরাসা থেকে নিবন্ধিত ১ হাজার তরুণ ডেলিগেটকে নিয়ে আয়োজিত ১২ ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের প্রশিক্ষণমূলক ও উৎসবমুখর এ আয়োজনে ছিল প্যানেল ডিসকাশন, ইয়ুথ ওয়ার্কশপ, নাসিহা সেশন, পুরস্কার বিতরণী এবং কবিতা ও সুরের জলসা।
শনিবার সকাল ৯টায় সৃজনঘরের নির্বাহী সদস্য মুফতি আবু সুফিয়ান নাসিম ও সহযোগী সদস্য মুফতি ওয়ালী রাহমাননের হৃদয়গ্রাহী তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানের পরিচালনায় ছিলেন সৃজনঘর সভাপতি লেখক ও গবেষক হামমাদ রাগিব।
যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন সৃজনঘরের সাধারণ সম্পাদক ইবাদ বিন সিদ্দিক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাম্মাদ তাহমীম।
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্যানেল ডিসকাশনে দৈনিক প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক মনযূরুল হকের সঞ্চালনায় ‘বাঙালি মুসলমানের সাংস্কৃতিক রাজনীতি: নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি’ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন কথাসাহিত্যিক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর, কথাসাহিত্যিক সাবের চৌধুরী, তরুণ ইন্টেলেকচুয়াল ইফতেখার জামিল ও অ্যাক্টিভিস্ট জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ।
বেলা ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত ইয়ুথ ওয়ার্কশপে স্বতন্ত্র তিনটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন খ্যাতিমান তিনজন বিশেষজ্ঞ ইন্সট্রাক্টর। এর মধ্যে বহুমাত্রিক লেখক ও বুদ্ধিজীবী মুসা আল হাফিজ প্রশিক্ষণ দেন ‘ইসলামি ঐতিহ্যের আলোকে তরুণদের আত্মপরিচয়’ বিষয়ে, খ্যাতিমান লেখক ও আলোচক মুফতি রেজাউল করিম আবরার প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ‘ইসলামের আলোকে লিডারশিপ ও ক্যারিয়ার ভিশন’ বিষয়ে এবং ‘হালাল ফাইন্যান্স ও আধুনিক ব্যাংকিং: তরুণদের আগামীর পথচলা’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ইসলামি অর্থনীতি গবেষক ও লেখক মোহাইমিন পাটোয়ারী।
বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাসিহা সেশনে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন খ্যাতিমান তিনজন ইসলামিক স্কলার। এর মধ্যে মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ ‘দেশীয় ও বৈশ্বিক সংকট: রাজনৈতিক সচেতনতার তরিকা’ বিষয়ে, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ ‘স্ট্রেস ডিপ্রেশন ও আধ্যাত্মিক শান্তি’ বিষয়ে এবং মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন ‘নিজেকে উন্নত করার নাসিহা’ বিষয়ে তরুণদের জন্য বিশেষায়িত আলোচনা করেন।
সন্ধ্যা ৬টায় ছিল সৃজনঘর আয়েজিত কলেজ-ইউনিভার্সিটিভিত্তিক জাতীয় সিরাত প্রতিযোগিতার ভিজুয়াল আসর ‘টুয়েলভ মিনিট সিরাত ২০২৫’-এর পুরস্কার বিতরণী। এতে সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে প্রথম স্থান অধিকারী বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান নাঈমকে পবিত্র উমরাহ’র প্যাকেজ, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার শিক্ষার্থী ইহসানুল হক খানকে একটি ল্যাপটপ এবং ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী মুবিদুর রহমান নাবিলকে একটি ডেস্কটপ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এ ছাড়াও দেশের ৮০টি কলেজ ইউনিভার্সিটি থেকে সিরাতের ব্যতিক্রমী ও গবেষণামূলক এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রতিযোগীদের মধ্যে সেরা ১২-তে স্থান পাওয়া বাকি ৯জনের হাতেও নগদ অর্থ-সহ বিশেষ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
টুয়েলভ মিনিট সিরাতের পুরস্কার ছাড়াও দিনব্যাপী প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ডেলিগেটদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ঝটপট প্রশ্ন ঝটপট উত্তর এবং টেন মিনিট এক্সামে বিজয়ীদের হাতেও পুরস্কার তুলে দেয় সৃজনঘর।
পাশাপাশি বহুজাতিক এআই কোম্পানি কো-ওয়ার্কারের টাস্কে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী আরও ৩ জনের হাতে তুলে দেওয়া হয় যথাক্রমে ল্যাপটপ, ট্যাব ও স্মার্টফোন।
দিনব্যাপী পরিশ্রমপূর্ণ আয়োজনে অংশগ্রহণের পর ডেলিগেটদের আত্মিক প্রশান্তির জন্য ছিল ‘কবিতা ও সুরের জলসা’। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আয়োজিত এ পর্বে কবিতা আবৃত্তি করেন সিলেটের খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী কবি মীম সুফিয়ান। সংগীত পরিবেশন করেন খ্যাতিমান সুরকার গীতিকার আহমদ আবদুল্লাহ, শেখ এনাম, আহমদ উসমান এবং শেখ এমাদ।
রাত ৯টায় মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় হাজার সিলেটের ব্যতিক্রমধর্মী এই আয়োজন।