রেজওয়ান আহমদ : সিলেটের ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন আগামী ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে প্রার্থীদের প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ। সিলেটের ব্যবসায়ী মহলে ও ভোটারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। প্রার্থীদের পাশাপাশি ভোটাররাও বসে নেই। পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ভোটাররাও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রার্থীরা ভোটারদের কাছ থেকে বিজয়ী হওয়ার জন্য দোয়া চেয়ে নিচ্ছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই প্যানেলের প্রার্থীরা ইতোমধ্যে সিলেট নগরী সহ ও বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা করছেন।
আগামী ১লা নভেম্বর চেম্বারের নির্বাচনে ২৭টি পদের মধ্যে ২৬টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে এসোসিয়েট ১ হাজার ৮০জন, অর্ডিনারি ২ হাজার ৪৮ জন, ট্রেড গ্রুপ ১০ জন, টাউন এসোসিয়েশন ২ জন সহ মোট ৩ হাজার ১শত ৪০ জন ভোটার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করবেন। নির্বাচনে দুটি প্যানেলের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রার্থীরা। এবারই প্রথম ভোটারদের সরাসরি ভোটে সভাপতি নির্বাচিত করা হবে। দুটি প্যানেলের মধ্যে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট ব্যবসায়ী ফোরাম নামে এই দুই প্যানেলে রয়েছেন ৪২ জন প্রার্থী।
সিলেট ব্যবসায়ী ফোরামের প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি প্রার্থী এহতেশামুল হক চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন এনামুল কুদ্দুছ চৌধুরী, সহ-সভাপতি রয়েছেন মো. নাফিস জুবায়ের চৌধুরী। পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আব্দুর রহমান রিপন, মোতাহার হোসেন, আব্দুল হাদী পাবেল, সৈয়দ জাহিদ উদ্দিন, মো. ইমরান হোসাইন, মো. আবুল কালাম, খন্দকার কাওসার আহমদ রবি, মো. মাজহারুল হক, মো. নাহিদুর রহমান, কামরুল হামিদ, শামছুর রহমান কামাল ও আবু সুফিয়ান। অ্যাসোসিয়েট শ্রেণি থেকে পরিচালক পদে রয়েছেন জিয়াউল হক, মোক্তাদির হোসেন তাপাদার, মো. মামুনুর রশিদ, দিবাকর দাস ঝোটন, রেহান উদ্দিন রায়হান ও মো. ইব্রাহিম খলিল।
সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি প্রার্থী ফালাহ উদ্দিন আলি আহমদ, সিনিয়র সহ সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হুমায়ুন আহমদ ও সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন মাছুম ইফতেখার রসূল শিহাব। অর্ডিনারি শ্রেণিতে পরিচালক পদে রয়েছেন আক্তার হোসেন, এনায়েত আহমেদ মনি, মোহাম্মদ সাহিদুল হক সোহেল, মো. মুজাহিদ খান গুলশান, মো. মাসনুন আকিব বড়ভূইয়া, জুবায়ের আহমদ চৌধুরী সুমন, ডা. নুরুল হাসান সিদ্দিকী, ইমতিয়াজ তাহমিন সুবহান বাবু, আব্দুল হাফিজ জোয়ারদার তুহিন, এনামুল হক কুটি, মো. তোফায়েল হোসেন (কচি) ও আব্দুল বাছিত। অ্যাসোসিয়েট শ্রেণি থেকে পরিচালক পদে রয়েছেন চন্দন সাহা, আব্দুর রহমান, ওমর ফারুক, মো. আবুল কালাম, মশিউর রহমান হাফিজ ও নজরুল ইসলাম।
এবারের নির্বাচন বোর্ডের দায়িত্বে রয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ও চেম্বার নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা, সিলেটে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাচন বোর্ডের সদস্য মাহমুদ আশিক কবির, সহকারী কমিশনার ও নির্বাচন বোর্ডের সদস্য তানভীর হোসাইন সজীব। নির্বাচন আপিল বোর্ডের দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় সরকার সিলেটের উপ-পরিচালক (উপসচিব) ও চেম্বার নির্বাচনের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সুবর্ণা সরকার, সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও আপিল বোর্ডের সদস্য জুয়েল উদ্দিন, সহকারী কমিশনার ও আপিল বোর্ডের সদস্য মোঃ পারভেজ।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ফোরামের সভাপতি প্রার্থী এহতাশামুল হক চৌধুরী বলেন, ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের ফসল এই নির্বাচন। চেম্বারকে পুনরায় কার্যকর ও সিলেটকে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলাই হবে আমার মূল লক্ষ্য।
সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী ফালাহ উদ্দিন আলি আহমদ বলেন, আমরা নির্বাচিত হলে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে কাজ করব। এছাড়া প্রান্তিক এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য আমরা কাজ করে যাবো। সিলেট অর্থনীতির বিরাট একটা ভাণ্ডার। বিগত সময়ে সরকার এগুলো থেকে ব্যবসায়ীদের দূরে রেখেছিল। আমরা এই দিকটাতে নজর দিব। আমরা প্রতিনিয়িত ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ রাখছি, তাদের কাছে যাচ্ছি, আশা করি নির্বাচনটি প্রতিদ্বদ্ধিমূলক হবে।
নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের সাথে আলাপ হলে কয়েকজন ভোটার বলেন, আমরা চাই সিলেট চেম্বার হবে ব্যবসায়ী বান্ধব। যারা ব্যবসায়ীদের কল্যাণের জন্য কাজ করবে তাদেরকেই আমরা ভোট দিয়ে বিজয়ী করবো। চেম্বার ব্যবসায়ীদের সংগঠন, এখানে কোন রাজনীতি হবে না। ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করাই হবে এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য।
গত ৪ আগস্ট সিলেট চেম্বার নির্বাচন বোর্ড ২০২৫-এর চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নুরে জামান চৌধুরী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয় এবং ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। ৩০ সেপ্টেম্বর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয় ২২ অক্টোবর। নির্বাচন আপিল বোর্ডে প্রার্থীদের যাচাই-বাচাই শেষে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের অর্ডিনারী পরিচালক পদপ্রার্থী ইমতিয়াজ মোঃ তাহমিম সোবহান বাবু ও মোহাম্মদ এনামুল হক কুটি এর প্রার্থীতা বাতিল করেন নির্বাচন আপিল বোর্ড। ইতিমধ্যে অর্ডিনারী শ্রেণীর পরিচালক পদপ্রার্থী এ. এইচ. এম মোস্তাকীম চৌধুরী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। কেউ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলে ২৭ অক্টোবর আবারও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় ভেঙে পড়ে সিলেট চেম্বার। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফয়েজ হাসান ফেরদৌসের নেতৃত্বে সংগঠনটির কার্যক্রম চললেও সদস্যদের দাবির মুখে সভাপতি ও চার পরিচালক পদত্যাগ করেন, ফলে কার্যত চেম্বার অচল হয়ে পড়ে। এবার সকল সংকট কাটিয়ে নতুন নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এই সংগঠনটি। আগামী ১লা নভেম্বর চেম্বার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। নির্বাচনি আমেজে মুখর হয়ে উঠেছে সিলেটের ব্যবসায়িক অঙ্গন।