গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি ::: সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসন নিয়ে বিএনপি-র ভেতরে চলমান অনিশ্চয়তা দিন দিন জটিল রূপ নিচ্ছে। মাঠে সরব একাধিক নেতার ভিড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন সাবেক সিটি মেয়র ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। একাধিক সূত্র বলছে, তিনি দলীয় ‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে ইতিমধ্যে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। তবে আনুষ্ঠানিক দলীয় ঘোষণা না আসায় স্থানীয় বিএনপির অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মাঝে তৈরি হয়েছে স্পষ্ট বিভ্রান্তি ও অসন্তোষ।
দলীয় ঘরানার একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “ঘোষণার আগেই প্রার্থী মাঠে নামলে সেটি দলীয় শৃঙ্খলার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে করে স্থানীয় নেতারা বিভ্রান্ত হন, দ্বন্দ্ব বাড়ে।”
প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী ও হেলাল আহমদ। তারা দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সক্রিয় এবং স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য মুখ হিসেবে পরিচিত। প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় ভোটারদের মাঝে শোডাউন ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।
সূত্র বলছে, আরিফুল হক চৌধুরী শুরুতে সিলেট-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তবে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সরাসরি নির্দেশে তাকে সিলেট-৪ এ প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। নির্দেশ মেনে তিনি গত সপ্তাহে কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে মতবিনিময় করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সভা, আলেম-ওলামাদের সঙ্গে বৈঠক এবং বিএনপি নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে তিনি স্পষ্ট জানান, দল চাইলে তিনি প্রস্তুত।
তার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, “আরিফ একমাত্র প্রার্থী যিনি তিন উপজেলা নিয়ে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা সামনে এনেছেন।”
তবে এডভোকেট জামান বলেন, “কেউ এসে নিজের মুখে নিজেকে প্রার্থী বললেই তো হবে না, দলের ঘোষণা থাকতে হবে। তার আগ পর্যন্ত আমি নিজেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবেই দেখছি।”
একইসঙ্গে গোয়াইনঘাটে আব্দুল হাকিম চৌধুরীর মশাল মিছিল, মিফতাহ সিদ্দিকীর নীরব কিন্তু স্থায়ী গণসংযোগ এবং হেলাল আহমদের প্রচারণা প্রমাণ করছে, এ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে জোরালো প্রতিযোগিতা চলছে। বিশেষত গোয়াইনঘাট এলাকায় হাকিম চৌধুরীর জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক ভিত্তি স্পষ্ট।
এ দিকে ১২ নভেম্বর লন্ডনের আল মক্কাহ গ্রিলে প্রবাসী সিলেটবাসীর এক আলোচনা সভায় বলা হয়, “বহিরাগত কাউকে সিলেট-৪ এ প্রার্থী দিলে আমরা ভোট বর্জন করব।” এই ঘোষণাকে হালকাভাবে না দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রবাসী ভোটারদের প্রভাব এই আসনে গুরুত্বপূর্ণ, যা মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় চাপ তৈরি করবে।
বিএনপির একাধিক তৃণমূল নেতা আক্ষেপ করে বলেন, “প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় এলাকায় বিভ্রান্তি বাড়ছে। সবাই যে যার মতো প্রচারণা চালাচ্ছেন এতে করে দলীয় কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
জনপ্রিয়তার দিক থেকে আসনটিতে আব্দুল হাকিম চৌধুরী সবার থেকে এগিয়ে রয়েছেন বলে মাঠের চিত্র থেকে জানা যায়। গোয়াইনঘাটে তার শোডাউন ও মশাল মিছিল ইতোমধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মাঠে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন মিফতাহ সিদ্দিকী ও হেলাল আহমদ। তিন উপজেলার জনসম্পৃক্ততা ও শৃঙ্খলা বজায় রেখেই তারা কাজ করছেন।
তবে আরিফুল হক চৌধুরীর আসায় এক পক্ষ আশাবাদী হলেও, অন্য পক্ষের ভেতরে ক্ষোভ ও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। একাধিক জায়গায় সামাজিক মাধ্যমে নেতিবাচক পোস্ট, নেতাকর্মীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এবং মশাল মিছিলের মতো ঘটনাগুলো অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ইঙ্গিত দেয়। একাধিক প্রার্থীর সক্রিয়তা ও বিভক্ত অবস্থান দলের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মনে করছেন নেতা কর্মীরা।