নিউজ ডেস্ক :: ভারতের মেঘালয়ে কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় বিশেষ বরাদ্দে নির্মিত নজরখালী বাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে করে টাংগুয়ার হাওরের কয়েক হাজার কৃষকের বোরো ধান ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া জমির পরিমাণ ছয় হাজার হেক্টর হবে বলে জানিয়েছেন হাওরপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) না হলেও এটি নির্মাণে সংস্থাটি ব্যয় করেছে ৯ লাখ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের অনিয়মের কারণেই সেটি ভেঙে গেছে।
জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেছেন, ‘আমরা আগে থেকেই সর্তক করে দিয়েছিলাম; কিন্তু আমাদের কথা কেউ শোনেনি। হাওরের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার দায়ভার প্রশাসনকে নিতে হবে। আমরা কঠোর আন্দোলন শুরু করব।’
তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় বাঁধটির অবস্থান। শনিবার বাঁধটি পরিদর্শন করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই বাঁধটি ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় ফসলরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে পড়েছে। হাওরে তাহিরপুর অংশে প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে, এর মধ্যে ২৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যে কয়েক দিন যাবত বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জের সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, পাটলাইসহ বিভিন্ন নদীর পানি বেড়েছে। টাংগুয়ার হাওরপাড়ের গোলাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ মিয়া জানান, হাওরে ২৪ হাজার ৭০৩ একর জলাভূমি থাকলেও চাষাবাদের জমি রয়েছে মাত্র তিন হাজার একরের কিছু বেশি। তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার চার ইউনিয়নের কৃষকরা সেগুলোতে চাষাবাদ করেন। গত ২৯ মার্চ বাঁধে ফাটল দেখা দেয়।
গোলাবাড়ী ও জয়পুর গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কৃষকদের কয়েকদিনের প্রাণপণ চেষ্টায় মেরামত করেও রক্ষা করা যায়নি নজরখালী বাঁধটি। এদিকে, উপজেলার মাটিয়ান হাওরের আনন্দ নগরের পূর্বের খালে বাঁধের মাটি ধসে পড়েছে।
পানির উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা জানান, এটি ফসল রক্ষার বাঁধ নয়। এটা প্রকল্পের বাইরে। গ্রামবাসীর অনুরোধে বাঁধটিতে কিছু ভাঙা অংশ মেরামত করা হয়েছে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির জানান, এই বাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নয়। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বাঁধটি মেরামতের জন্য বর্ধিত করে করে ২৪ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) অধীনে দেওয়া হয়েছিল। পিআইসির সভাপতি সেন্টু মিয়া বাধঁটির কাজ বাস্তবায়ন করেন। বড় ভাঙনের শিকার হওয়ায় বাঁধটি আর মেরামতের কোনো সুযোগ নেই। ফলে নদীর পানি যত বাড়বে হাওরের ধান বাঁচানো ততটাই কঠিন হয়ে পড়বে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
তবে সেন্টু মিয়ার দাবি, বাঁধ নির্মাণে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। পানির প্রবল চাপের কারণে বাঁধ ভেঙে গেছে।
নজরখালী বাঁধ নির্মাণে নিম্নমানের কাজ হয়েছে দাবি করে কৃষক বকুল মিয়া, আমির মিয়ারা জানিয়েছেন, এ বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের গইনা কড়ি হাওর, এরাইল্লার হাওর, সন্ন্যাসী হাওর, প্লাইল্লার বিল হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঝুঁকি রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, এখন উপজেলার প্রতিটি বাঁধে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। বাঁধ রক্ষায় সবাইকে সর্তক থাকার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।