নিউজ ডেস্ক :: হঠাৎই উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। মিছিলের নামে দেশীয় অস্ত্রসহ ক্যাম্পাসে ঢুকতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তাদের দাবি, ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে নেতা কর্মীদের ওপর। তবে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছবি বলছে ভিন্ন কথা। প্রকাশিত বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে মারমুখী ভঙ্গিতেই ঢুকেছিলেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। সেখান থেকেই শুরু উত্তেজনার।
ছাত্রলীগ বলছে, ক্যাম্পাসে সহিংসতা ঠেকাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসেছিল। তবে ছাত্রদল বলছে, দলীয় নেতাকর্মীদের রক্ষা করতেই তারা প্রস্তুত হয়ে এসেছিলেন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকালের দিকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে ছাত্রদল। মিছিলে ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আকতার হোসেন ও সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান নেতৃত্ব দেন।
মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে পৌঁছালে হলের ভেতর ও আশপাশ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কিছুটা পিছু হটেন। কিন্তু মিনিটখানেকের মধ্যেই তারা আবার লাঠিসোঁটা হাতে সংগঠিত হয়ে ছাত্রলীগকে ধাওয়া দেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তখন পিছু হটে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেন।
আর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দোয়েল চত্বরে অবস্থান নেন। এ সময় দুই পক্ষের মুহুর্মুহু ইট-ছোড়াছুড়ি চলতে থাকে। ছাত্রলীগের পাল্টা ধাওয়ায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দৌড়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ছাত্রলীগের হয়ে এই পাল্টা ধাওয়ায় নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় সাহিত্যবিষয়ক উপসম্পাদক এসএম রিয়াদ হাসানসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা। একই সময়ে লাঠি হাতে পিকেটিং করতে দেখা যায় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে।
ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকের লাঠি হাতে যে ছবি প্রকাশ হয়েছে সেটা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের রক্ষার জন্য।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিনা উসকানিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। সে সময় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ছাত্রদল যদি পাল্টা ধাওয়া না দিতেন তাহলে আমাদের অনেক নেতাকর্মীর প্রাণ যেতো। তাই আমরা মনে করি আত্মরক্ষা ও পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার ভূমিকা সঠিক ছিল।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, আমরা প্রতিদিনের ন্যায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলাম। বিনা উসকানিতে আমাদের ওপর হামলা করে আমাদের নেতা-কর্মীদেরকে গুরুতর আহত করা হয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাদের আহত নেতাকর্মীদের হাসপাতালে নিতে বাধা দিচ্ছে। এমনকি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে আমাদের ছাত্রদলের আহত নেতাকর্মীরা চিকিৎসা নিতে যায়। সেখানেও লাঠিসোটা হাতে যায় ছাত্রলীগের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা। আমরা আজকের এই ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, ছাত্রদল সংগঠনটি রাজাকারদের ডিস্ট্রিবিটর, সন্ত্রাসের ডিস্ট্রিবিটর। তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর মাঝে ভীতি ছড়াচ্ছে ও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম থাকবে কি না সেই আশঙ্ক করছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার সময়ের আলোকে বলেন, ঘটনার সংবাদ পেয়ে আমরা পুলিশ পাঠিয়েছি। সংঘর্ষে মোট কত জন আহত হয়েছে সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।