নিউজ ডেস্ক :: ‘একমাস হয়ে যাচ্ছে ঘরে ফিরতে পারছি না। কত কষ্ট করেছি জীবনে তবে এরকম মহাকষ্টে কখনও পড়িনি। এই প্রথম কোরবানির ঈদে মাংস খেতে পারছি!’ কথাগুলো বলতে বলতে কখন যে রহিমা বেগমের চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে শুরু করেছে তা খেয়ালই নেই তার। হঠাৎ কণ্ঠস্বরও নিচু হয়ে গেল। আর যেন কথাই বলতে পারছেন না তিনি। এ তো গেল রহিমার কথা।
সত্তর বছর বয়সী সায়েরা বেগম এগিয়ে এসে জানালেন, তিন সপ্তাহের বেশী সময় ধরে গোসল, ঘুম, খাওয়া দাওয়া কিছুই যেন ঠিকঠাক হচ্ছে না তার। পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম আর চলছে না।
রহিমা-সায়েরা এই দুই নারীর সঙ্গে রবিবার বিকেলে কথা হয় সিলেট রেল স্টেশনে। সেখানে তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। শুধু এই দুই নারীই নন এরকম অন্তত ২৫ টির অধিক পরিবার বন্যার কারনে আশ্রয় নিয়েছে রেল স্টেশনের বারান্দায়।
আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সদস্যরা জানান তারা সবাই সিলেট নগরীর মোমিনকলা এলাকার বিভিন্ন কলোনীর বাসিন্দা। সিলেট-সুনামগঞ্জের ভয়াল বন্যায় তাদের ঘরে পানি উঠেছে। নগরীর সব এলাকার পানি নেমে গেলেও এখন পর্যন্ত তাদের ঘর জলমগ্ন। তাই নিরুপায় হয়েই রেল স্টেশনে বসবাস করছেন। বর্তমানে তাদের দুবেলা খাবার বিতরণ করছে রেল স্টেশনের ফাঁড়ি পুলিশ। ত্রান সহায়তাও আসছে না তেমন।
ঈদ প্রসঙ্গ তুলতেই অন্ধ স্বামী আর তিন সন্তান নিয়ে চরম অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেন সুফিয়া বেগম। বলেন, বাবা- আমাদের ঈদ নেই। রাত হলেই বাতাস – বৃষ্টির জন্য ঘুমাতে পারিনা। দিনে মানুষ আর টেনের শব্দ। এভাবে কি বাঁচা সম্ভব?
সুফিয়া বলেন, আমার স্বামী অন্ধ মানুষ। তিন সন্তান নিয়ে কিভাবে আছি কেউ খবর নেয় না। অন্যান ঈদে তো সাহায্য পেতাম এবার তাও পাচ্ছি না। ঘরে এখনও হাটু পানি। কবে ফিরমু তার নিশ্চয়তা নাই। আমরা গরীব মানুষ। আমরার ঈদ আছে নি। যাও অন্যান্য বছর করতাম এবার তো বন্যায় আমাদের ঈদ আনন্দ হারিয়ে গেছে।
সরকারি হিসেবে সিলেটে চলমান বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ। আর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অন্তত ৮০ হাজার ঘরবাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে ঘরবাড়ি হারানো ১০ হাজার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে। তবে বেশিরভাগই এখনও ভাঙা ঘর মেরামত করতে পারেননি। এছাড়া পানি নামায় এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
ফলে এবার লক্ষাধিক মানুষের ঈদ কাটছে আশ্রয়কেন্দ্রে বা অন্যত্র আশ্রিত হয়ে। অনেকের ভাঙা ঘরে।
বর্তমানে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগরসহ ৭টি উপজেলার অনেক জায়গা এখনো বন্যা কবলিত রয়েছে। কয়েক দিন পানি কিছুটা কমেছে। নদীর তীরবর্তী এলাকা এখনও ডুবে রয়েছে। রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত।