নিউজ ডেস্ক :: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকায় বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবহন মালিকদের সংগঠন। ফলে সকাল থেকেই সারা দেশে চলছে এক প্রকার অঘোষিত গণপরিবহন ধর্মঘট।
শুক্রবার (৫ নভেম্বর) ছুটির দিনে জরুরি প্রয়োজনে বের হয়ে অনেকেই পড়েছেন বিপাকে। এ সময় অনেকেই হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে উদ্দেশে রওনা দেন। এছাড়া সিএনজি অটোরিকশা কিংবা পাঠাও-উবার সার্ভিস চালু থাকলেও ভাড়া চাওয়া হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। তাও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মাঝেমধ্যে দু’একটি বিআরটিসির বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে স্বাভাবিক ভাবে চলছে না কোনো বেসরকারি পরিবহনের বাস। এর ফলে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রিকশা, সিএনজি, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস।
বাড্ডার আদর্শনগর থেকে কমলাপুর স্টেশনে যাচ্ছিলেন সাইফুল ইসলাম। বাস, সিএনজি কিছুই না পেয়ে তিনি পায়ে হেঁটেই রওনা হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ার কারণে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়লাম আমরা সাধারণ যাত্রীরা। আমাদের কথা না ভাবে সরকার, না ভাবে পরিবহন মালিকেরা। সবাই যার যার স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত। বাস বন্ধ থাকলে সাধারণ মানুষের এতে কতটা যে ভোগান্তি হতে পারে সেটা অনুধাবন করার মতো ক্ষমতা কারও নেই। পরিবহন মালিকেরা তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে ভাড়া বাড়ানোর পায়তারায় বাস বন্ধ করে দিয়েছে।’
মগবাজার মোড়ে বাসের অপেক্ষায় থাকা তরুণী রাশিদা খাতুন বলেন, ‘এক ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করলাম। কোনো বাস আসল না। আমি মিরপুর যাব বাবার বাসায়। রিকশা, সিএনজি কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু দূর হাঁটব। দেখি রিকশা পেলে যাব, তা আজ যত টাকাই ভাড়া নিক না কেন।’
এদিক গণপরিবহন না থাকায় আগের থেকে বেশি যাত্রী পাচ্ছেন রিকশাচালকেরা। তবে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। এ বিষয়ে রিকশাচালক রহিম আলী বলেন, ‘ বাস বন্ধ তাই ৪০ থেকে ৫০ টাকার নিচে এখন কোনো ভাড়া নেই। সকাল থেকে ভালোই যাত্রী পেয়েছি। সব সময় তো আর এমন সুযোগ থাকে না। যাত্রীরাও যুক্তি করে দুজন মিলে বিভিন্ন গন্তব্য যাচ্ছে, তাই আমরাও ভাড়া বেশি নিতেছি।’
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণে গণপরিবহন তিন মাস বন্ধ ছিল। ওই লোকসান এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে হঠাৎ ডিজেল ও কেরোসিন প্রতি লিটারে ১৫ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে মালিকদের মাথায় বজ্রপাতের মতো হয়েছে। তারা এটা সহ্য করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কোনো মালিক বাস না চালালে তাকে বাধ্য করা হবে না। আবার কেউ চালালে তাকে বাধা দেওয়া হবে না।
তেলের দাম কমানোর দাবিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংক লরি-প্রাইম মুভার মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ আজ থেকে ধর্মঘট ডেকেছিল। সার্বিক বিষয়ে সংগঠনের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান গণমাধ্যমকে বলেন, মাত্র দু’দিন আগেই সেতুর টোল বেড়েছে। করোনায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে পরিবহন খাতের। এমন সময়ে তেলের দাম এক লাখে ১৫ টাকা বৃদ্ধি জুলুম। তাদের সংগঠনের সারাদেশের ২০০ শাখা ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিজেলের দাম না কমা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।
এদিকে তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে বাসের ভাড়া পুননির্ধারণ করতে সরকারকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। আগামী রোববার বিআরটিএ-তে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একইসঙ্গে লঞ্চ মালিকেরাও ভাড়া বাড়াতে চান। এ বিষয়ে আগামী সোমবার সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।