নিউজ ডেস্ক :: প্রায় ১৫ বছর ধরে আলাদা ঘরে শিকলবন্দি জীবন পার করছেন ৩৫ বছর বয়সী কোরআনে হাফেজ আব্দুল খালেক। এ ঘরেই তার খাওয়া-দাওয়া, প্রস্রাব-পায়খানা ও ঘুমানো। আব্দুল খালেকের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের ভোটাল গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল কুদ্দুস।
পরিবার জানায়, বাবা আব্দুল কুদ্দুসের ইচ্ছায় উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের জয়শ্রী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসায় হাফেজি পড়া শুরু করেন খালেক। পড়াশোনায় খুব মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু হাফেজি পড়া শেষ করার কয়েক মাস পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। হারিয়ে ফেলেন মানসিক ভারসাম্য। পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করানো হয়। পরবর্তীতে টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গত ১৫ বছর ঘরের পিলারের সঙ্গে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।
আব্দুল খালেকের ভাই মো. মোস্তফা বলেন, মাদরাসা থেকে হাফেজি শেষ হওয়ার পর ১৫ বছর আগে হঠাৎ খালেকের মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। বাবার কিছু সম্পদ ছিল। সেগুলো বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েছি। কোনো লাভ হয়নি। তখন থেকে শিকলে বেঁধে রাখতে হয়। একবার ছেড়ে দিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। রায়পুর-লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে খুঁজে তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর আর ছাড়িনি।
তিনি আরো বলেন, আলাদা একটি ঘর আছে। মলমূত্র ত্যাগের জন্য চৌকির পাশ দিয়ে লাইন করে দিয়েছি। শিকলে বাঁধা অবস্থায় কাটে তার সবসময়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বাহার পাটোয়ারী বলেন, তাকে সহযোগিতা করা হবে। তার চিকিৎসার জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
আব্দুল খালেকের মা শামছুন্নাহার বলেন, খালেক কোরআনে হাফেজ হয়ে পরিবারের পাশাপাশি এলাকার মানুষকে আলোকিত করবে- এমন চিন্তা থেকে হাফেজি পড়ান বাবা। কিন্তু হাফেজ হলেও ১৫ বছর ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ। ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে। এদিক-সেদিক চলে যায়। সারাক্ষণ দেখে রাখা সম্ভব হয় না। এ জন্য বেঁধে রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা গরিব মানুষ। স্বামী শ্রমিকের কাজ করতেন। ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর সম্পত্তি বিক্রি করে চিকিৎসা করাই। তার বাবা কয়েক বছর আগে মারা যান। এখন ঠিকমতো সংসার চলে না, ছেলের চিকিৎসা করাবো কীভাবে?
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শামছুন্নাহার বলেন, তাকে সুস্থ করার জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাই। রাতে ছেলের পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় ঘুমানোর ব্যবস্থা করি। কিন্তু ছেলের এমন অবস্থায় সারারাত আমাকে জেগে থাকতে হয়। কখন কি করে বসে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।
জয়শ্রী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসার মুহ্তামিম হাফেজ মহসিন মিয়া বলেন, আব্দুল খালেক মেধাবী ছাত্র ছিল। কোরআনে হাফেজ। অসুস্থ হওয়ার পর আমরা মাদরাসা থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী দোয়ার আয়োজন করেছি। বর্তমানে শিকল বাঁধা অবস্থায় আছে। বিষয়টি অনেক কষ্টের।
গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গণি বাবুল পাটোয়ারী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে আব্দুল খালেকের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। তবে মানসিকভাবে অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হবে। এ দায়িত্ব পরিবারের। তারা যদি সহযোগিতা চান আমরা করবো।