নিউজ ডেস্ক :: সিলেটে জ্বালানি তেলের সঙ্কট যেনো কাটছেই না। দিন দিন এ সঙ্কট আরও তীব্র হচ্ছে। ফলে এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জ্বালানি তেলে চাহিদা পূরণে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে সিলেটে চলছে জ্বালানি তেলের সঙ্কট। চলতি বোরো মৌসুমে আরও তীব্র হয়ে ওঠে। দীর্ঘ সময়েও জ্বালানির সঙ্কট সমাধান না হওয়ায় গেল বুধবার থেকে আন্দোলনে নেমেছে এ খাতের মালিক-শ্রমিকদের ৫টি সংগঠন। ৬ দফা দাবিতে গেল বুধবার সিলেট মহানগরে তেলবাহী ট্যাংক লরি নিয়ে মিছিল করেছেন তারা।
জানা গেছে, হাওর প্রধান সিলেট অঞ্চলের হাওরগুলোতে বোরো চাষ হয়। বোরো ধানে সেচের জন্য এই সময়ে সিলেটে ডিজেলের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ বাড়ে। কিন্তু জ্বালানি তেলের অব্যাহত সঙ্কটের ফলে বাড়তি চাহিদা মেটাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
সিলেট পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটর এজেন্ট এবং পেট্রোলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেন, শুস্ক মৌসুমে সিলেটে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। তবে এখন তারা সপ্তাহেও ১০ লাখ লিটারের জোগান পাচ্ছেন না। ফলে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সংগঠনটির নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিশোধনাগার বন্ধ থাকা এবং চট্রগ্রাম থেকে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল না আসায় এ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে সিলেটের কয়েকটি রিফুয়েলিং স্টেশন জ্বালানি সঙ্কটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে জ্বালানি সঙ্কট দূরসহ ৬ দফা দাবিতে গেল বুধবার থেকে আন্দোলনে নেমেছে ‘সিলেট বিভাগীয় পেট্রোলপাম্প, সিএনজি, এলপিজি, ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’। তাদের ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ, গ্যাসের লোড বৃদ্ধি, সিএনজি পাম্পের সংযোগ বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম বন্ধ করা, বন্ধ থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত শোধনাগার ফের চালু করা প্রভৃতি।
সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা জানান, আগে সিলেটের গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত উপজাত দিয়ে স্থানীয় শোধনাগারগুলোর মাধ্যমে পেট্রোল ও অকটেন উৎপাদন করে চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠানো হতো। কিন্তু ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিএসটিআইর মান অনুসরণ করতে না পারার অজুহাতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সিলেটের ৬টি শোধনাগার বন্ধ করে দেয়া হয়।
ওই ৬টি শোধনাগারের মধ্যে গোলাপগঞ্জের রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড-আরপিজিসিএলের দুটি প্ল্যান্ট থেকে ৮০০ ও ৫০০ ব্যারেল, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের আওতাধীন হরিপুরে ৬০ ব্যারেল, কৈলাসটিলায় ৩০০ ব্যারেল এবং রশিদপুরের দুটি প্ল্যান্টে যথাক্রমে ৩ হাজার ৭৫০ ও ৪ হাজার ব্যারেল পেট্রোল, ডিজেল ও এলপিজি উৎপাদন হতো।
সিলেটের শোধনাগারগুলো বন্ধ করে দেয়ার পর গ্যাসক্ষেত্র থেকে উপজাত হিসেবে পাওয়া কনডেনসেটগুলো চট্রগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি শোধনাগারে পাঠিয়ে দেয়া হতো। সেখান থেকে রেলের ওয়াগনে করে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিন সিলেটে এনে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এ তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। সিলেটের শোধনাগারগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই দেখা দেয় জ্বালানি সঙ্কট।
পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস্ অ্যান্ড পেট্রোলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটের প্লান্টগুলো বন্ধ, তার উপর রয়েছে রেলের ওয়াগন সঙ্কট। তাই চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ পাই না আমরা।
তিনি জানান, এখন সিলেটে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সপ্তাহে চট্রগ্রাম থেকে ৩টি তেলবাহি ওয়াগন আসে। ৩ ওয়াগনে তেল আসে মাত্র ৯ লাখ লিটার। চাহিদা পুরণে আমরা বাধ্য হয়ে নিজ খরচে চট্রগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সড়কপথে তেল নিয়ে আসি। এতে খরচ অনেক বেশি পড়ে। আর চাহিদাও পুরণ করা যায় না। তাই অনেকেই এখন পাম্প বন্ধ করে দিচ্ছেন।
সিলেট বিভাগের চার জেলায় ১১৪টি পেট্রোল পাম্প ও সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে ৪৫টিসহ জেলায় মোট ৭০টি পাম্প রয়েছে। জেলার কমপক্ষে ৩টি গত দেড় বছরে বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।