নিউজ ডেস্ক :: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ২৮ তারিখে হরতালের নামে রাস্তায় যদি কেউ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, ভাঙচুর ও ধ্বংসাত্মক কিছু করে তাহলে নিরাপত্তা বাহিনী অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) চট্টগ্রামের দামপাড়ায় পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্বোধনের পর ২৮ তারিখ বাম জোটের হরতাল ও তাতে বিএনপির সমর্থনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি হরতাল-ধর্মঘট এটা রাজনৈতিক চর্চা। রাজনৈতিক দলগুলো এসব করতেই পারে। আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো সহিংসতার পথ পরিহার করবে। ভাঙচুর-ধ্বংসাত্নক কোনো কাজ করবে না। জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে না। করলে যেটা হয় সেটিই হবে।
তিনি বলেন, যে জন্য হরতাল ডেকেছে সেই তেলের দাম শুধু বাংলাদেশে বাড়েনি। সারাবিশ্বেই বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তার কারণে পরিবহন ব্যয় তিনগুণ হয়ে গেছে। আমদানির ক্ষেত্রে দাম যে অস্বাভাবিক বেড়েছে তার প্রভাব কিছুটা দেশের বাজারে পড়েছে। দাম যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ভ্যাট ও ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছেন।
পেঁয়াজ ও তেলের দাম নিম্নমুখী উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই, তারপরও যদি কেউ হরতাল ডাকে কিছু বলার নেই। আমাদের আবেদন থাকবে যারা হরতাল ডেকেছে তারা যেন কোনো রকম ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকে। জনজীবনের দুর্ভোগ সৃষ্টি না করে। জানমালের ক্ষতি না করে।
এর আগে মুক্তিযুদ্ধে ৮১ জন পুলিশ সদস্যের শাহাদাৎ বরণ ও ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাবলী সংরক্ষণ, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, শিল্প ও স্থাপত্যের ক্রিয়ামূলকতা ও মিনিমালিজমের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে উদ্বোধন করা হয় পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
এ সময় সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর ও আমন্ত্রিত অতিথিসহ জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন সময়ের পুলিশের পোশাক, তৎকালীন সময়ের সরকারি দফতরের চিঠি, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, বীরশ্রেষ্ঠদের বৃত্তান্ত, বর্তমান পুলিশ সদস্যদের পোশাক, দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের ম্যাপ, ফাঁসির মঞ্চ, ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে সংবলিত হল রুম, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যদের ছবি, তথ্য, বঙ্গবন্ধু কর্নার, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন বই, বঙ্গবন্ধুর ছবি ও তাঁর লেখা বই, মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র ইত্যাদি পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে যথাযথ উপস্থাপন, মাস্টারদা সূর্য সেনের ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহ ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম পুলিশের আত্মত্যাগের ইতিহাস, মাতৃভূমির জন্য গর্ব ও দেশাত্মবোধ এবং উদার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
সিএমপির তথ্যমতে, প্রায় ছয় হাজার বর্গফুট আয়তনের এই জাদুঘরে সংগ্রহ করা হয়েছে ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদার নেতৃত্বে গঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির সদস্যদের ছবি, ব্যবহৃত অস্ত্র, পোশাক ও বিভিন্ন জিনিসপত্র। জাদুঘরের একটি অংশজুড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। সেখানে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের চট্টগ্রামের অংশটির পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন স্মারক/ডকুমেন্ট স্থান পেয়েছে।
এছাড়া জাদুঘরে সংগৃহীত হয়েছে তৎকালীন পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র ও পোশাক, শহীদ পুলিশ সুপার এম শামসুল হকের স্মারক হিসেবে ব্যবহৃত র্যাংক ব্যাজসহ টিউনিক সেট, স্টিক, ক্যামেরা, কলম, বেল্ট, পোশাক, ক্যাপ এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আরআই আকরাম হোসেনের স্মারক হিসেবে তাঁর ব্যবহৃত রেডিও।
সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে ‘দিগ্বিজয়ী’ প্রথম উইলিয়ামের নেতৃত্বে সহস্রাধিক নর্ম্যান, ব্রেটন, ফ্লেমিশ এবং অন্যান্য ফরাসি প্রদেশের অধিবাসীদের এক যৌথ বাহিনীর ইংল্যান্ড আক্রমণ, বিজয় ও অধিকারের ফলশ্রুতিতে অ্যাংলো-স্যাক্সন জনগোষ্ঠীর ইকোলজিতে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল তার কিয়দংশের সুরাহা করার জন্য ১২৩৩ ও ১২৫২ সালে জারিকৃত অধ্যাদেশে ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড বা কনস্টেবুলারী নিয়োগের আবশ্যকতা লিপিবদ্ধ ছিল। শান্তি স্থাপন ও রক্ষা এবং আইন প্রয়োগকে কাঠামো প্রদান করা হয়ছিল ১২৮৫ সালের ওয়েস্টমিনিস্টার স্ট্যাটুটের মাধ্যমে।
অভিন্ন কায়দায় গোপনীয়তার সংস্কৃতি চর্চার ফলে পরবর্তী ৫০০ বছর পুলিশের ইতিহাসের অরৈখিকতা নিয়ে কোনো স্মারক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়নি বিধায় ১৮২৯ সালে রবার্ট পিল কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক মেট্রোপলিটন পুলিশকে তদানীন্তন নগর ও নাগরিকের আস্থা অর্জনে বহুমুখী নতুনত্ব আনয়ন করতে হয়েছিল।
বিজ্ঞানসম্মত, প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাজীবী ইতিহাসচর্চা ও গবেষণায় জানা যায় যে, রবার্ট পিলের নগর পুলিশ ও নাগরিকের মধ্যকার পারস্পরিক দূরত্ব ও পলায়নপরতা মূলত পুলিশের দেশ ও সমাজ সম্পৃক্তার ইতিহাস স্মারক ও প্রমানকের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে না পারার কারণেই। বর্তমান প্রজন্ম পরবর্তী প্রজন্মকে স্বাধীনতা, সমাজ, পুলিশ সম্পর্কে যে প্রসঙ্গ কাঠামো প্রদান করবে তার আলোকেই ভবিষ্যতের নাগরিকরা পুলিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন।
এই ইতিহাস সংবেদনশীলতা থেকেই চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ আধুনিক শিপ্প ও স্থাপত্যের মিশেলে নির্মিত জাদুঘরে নজীরবিহীন বিপ্লব ও দেশপ্রেমের স্মারক থরে থরে সাজিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।