নিউজ ডেস্ক :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে আজ গুম-খুনের কথা বলা হয়, ভোট কারচুপির কথা বলা হয়। কিন্তু এদেশে গুম-খুন, ভোট কারচুপির সৃষ্টি করেছিল জিয়াউর রহমান।
আজ মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
১৫ আগস্ট শুধু আমাদের পরিবারের ক্ষতি নয়, একটি দেশ ও জাতির ক্ষতি- মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বাবাকে আন্তর্জাতিকভাবে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু কোন বাঙালি তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) মারতে পারে এটা তিনি কখনও বিশ্বাসই করতে পারেননি।
যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা ১৫ আগস্টের খুনি, তাদের স্বজন ও কিছু অপরাধী দেশের বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্র করেছে। তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোন বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে মারতে পারে তিনি কখনো বিশ্বাসই করেন নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদাকে বিদেশ পাঠাও, আল্লাদের আর শেষ নেই। তার নাকি লিভার পঁচে গেছে, কি খেলে লিভার পঁচে আপনার সবাই জানেন, আমি তো বলেত চাই না।
বিএনপির ক্ষমতার সময়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কী হয়েছিল ঢাকা শহরে, বিদ্যুতের জন্য হাহাকার, পানির জন্য হাহাকার। সারের জন্য মাঠে নামায় ১৮ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
আমরা ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে গেলাম, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সে উৎপাদন কমিয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন— ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য সাদেক খান।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি।
আলোচনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি বক্তব্যের শুরুতে ১৫ আগস্ট এর কথা স্মরণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি ১৫ আগস্ট বাবা মা হারানো যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে কাছে ডেকে নেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পরশ এদিকে আয়। পরে শেখ পরশ স্টেজে উঠে আসেন এবং ছোট ভাই তাপসকে জড়িয়ে ধরে আবেগ আপ্লুত হয়ে চোখ মুছতে থাকেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন এই যে পরশ এখন বড় হয়ে গেছে। সেদিন ওদের মা দুইটা শিশুর কথা চিন্তা করেননি, নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। আমরা যারা স্বজন হারিয়েছি, আমরা তো বিচারও চাইতে পারিনি, বিচার চাওয়ার অধিকার রাখেনি, আজকে মানবাধিকারের কথা বলা হয়।
সারা পৃথিবী জুড়ে কিছু মানুষ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপতৎরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে এ সময় মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি, যুদ্ধাপরাধীদের স্বজনরাই বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। অপপ্রচারের উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। তবে আমরা সংঘাত চাই না।
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) নিজেদের স্বার্থে আন্দোলন করে। এখনো করছে। বলে খালেদা জিয়া অসুস্থ, বিদেশে পাঠাও। আহ্লাদের আর শেষ নেই। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। কিন্তু বয়োজ্যেষ্ঠ, অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না। তাই আমি আমার ক্ষমতাবলে তাকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিয়েছি। এখন তিনি সাজুগুজু করে হাসপাতালে যান। আবার ডাক্তাররা রিপোর্ট দেয়, তার অবস্থা খারাপ। লিভার পচে গেছে। কী খেলে লিভার পচে, সেটা আমি মুখ দিয়ে বলতে চাই না, সবাই জানে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে কোন মুখে চায়? বার বার আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমার নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। তারপরও আমি তো তার ছেলে কোকো মারা যাওয়ার পর গিয়েছিলাম সান্ত্বনা দিতে। মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও তার প্রতি অনেক দয়া দেখানো হয়েছে। আর দয়া দেখানো সম্ভব না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করেছি। এটা না করলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় আরও সমস্যায় পড়তে হতে পারে। অপচয় রোধ করতে হবে। সীমিত করতে হবে সব। এই যুদ্ধের (রাশিয়া-ইউক্রেন) ফলে পৃথিবী আরও ভয়াবহ অবস্থায় যাবে। নিজেদের যতটুকু জায়গা আছে, কাজে লাগাতে হবে, নিজের খাদ্যের জোগান যেন নিশ্চিত করা যায়।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনোদিন শ্রীলঙ্কা হবে না, হতে পারে না। শ্রীলঙ্কা যদি হয়, সেটা বিএনপির আমলে হয়েই গেছে। বিদ্যুৎ-পানির সংকট এবং সন্ত্রাস ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল তখনকার বাংলাদেশ। তখন মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ পরিকল্পনামাফিক। যে প্রকল্প মানুষের কাজে লাগবে, দেশের কল্যাণে আসবে, ফিডব্যাক আসবে- এমন প্রকল্পই নিয়েছি। আমরা ধার করে ঘি খাই না।
শোক দিবসের আলোচনায় রাখা বক্তব্যে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে এক কোটি পরিবারকে ৩০ টাকা কেজিতে চাল দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। কারণ এই যুদ্ধ আমেরিকা থামতে দেবে না। আমেরিকার নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত থামবে না এ যুদ্ধ। কাজেই আমাদের উৎপাদন অব্যহত রাখতে হবে।
পাকিস্তানে ত্রাণ পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বলেন, পাকিস্তানে বন্যা, সেখানে বাচ্চারা কষ্টে আছে। আমরা পাকিস্তানে রিলিফ পাঠাবো। তাদের প্রতিও আমাদের দায়িত্ব আছে।