নিউজ ডেস্ক :: সিলেটের মাটিতে এশিয়া কাপের শুরুটা দারুণ হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েদের। থাইল্যান্ডকে হারিয়েছে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে।
এবার সামনে কঠিন প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশকে খেলতে হবে পাকিস্তান নারী দলের বিপক্ষে। সোমবার (৩ অক্টোবর) সকালে সিলেট বিভাগীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গড়াবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচটি।
পরিসংখ্যান বলছে- পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জিতেছে কেবল একটি। তবে আপাতত ওসব ভুলে পাকিস্তানকে হালকাভাবেই নিচ্ছেন নিগার সুলতানা ও তার সহযোদ্ধারা।
এবার টুর্নামেন্টে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে এ দুই দল। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটারে সোমবার (৩ অক্টোবর) সকাল ৯টায় লড়বে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। সবশেষ এশিয়া কাপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের মেয়েদের হারানোর সুখস্মৃতি নিয়েই এবার নামবে বাংলাদেশ।
সবমিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের জয় মাত্র এক ম্যাচে। তবে সেটি আবার ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে। তবে ওয়ানডে ফরম্যাটে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিই জিতেছে টাইগ্রেসরা। এর মধ্যে ওয়ানডে বিশ্বকাপের জয়ও রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ফরম্যাটভেদে পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ভালো খেলার অনুপ্রেরণাই এবার কাজে লাগাতে চান বাংলাদেশ দলের তারকা অলরাউন্ডার রোমানা আহমেদ। রোববার (২ অক্টোবর) দলের অনুশীলনের ফাঁকে তিনি জোর দিয়েই বলেছেন, এবার ভালো কিছু করবে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচের জন্য পরিকল্পনার কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা তো আসলে ওভাবে নেওয়ার কিছু নেই। আমরা ওদের সঙ্গে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছি, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুটোই। আমার মনে হয় এখন অবধি যেভাবে প্রস্তুত আছি, ওদের সঙ্গে খেলার জন্য যথেষ্ট।’
ভালো করার প্রত্যয়ী বার্তায় রোমানা বলেন, ‘শেষ বিশ্বকাপে আমরা ওদের হারিয়েছি। বেশ কিছু সাফল্য আছে ওদের বিপক্ষে। শেষ অনেকদিন ওদের কাছে হারিনি। এবার আমাদের মেয়েরা অবশ্যই ভালো কিছু করবে। শেষ এশিয়া কাপেও আমরা ভালো করেছি। এখানেও আমরা খুব সতর্ক, নিজেদের সেরা চেষ্টাই করবো।’
টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় মাত্র একটি হলেও তা নিয়ে হতাশ হতে রাজি নন এ তারকা অলরাউন্ডার, ‘আমরা আমাদের শক্তির জায়গা দেখবো। আমরা শক্তভাবেই এগোচ্ছি। শেষ কয়েকটা টুর্নামেন্টে আমাদের মেয়েরা অনেক ভালো করেছে। সামনের ম্যাচগুলোতে আরও ভালো করবে। বড় কিছু অর্জন করার লক্ষ্য আমাদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওরা প্রস্তুত হয়ে এসেছে। আমরা আমাদের আক্রমণেই চলবো। ওদের শেষবার যেটা হারিয়েছি, ওয়ানডে ছিল। এখন টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সেরাটা দেবো। হার-জিত এটা খেলার পর বোঝা যাবে, কিন্তু আমরা নিজেদের সেরাটা দেবো।’
এদিকে, নারী ক্রিকেটারদের এমন সাফল্যে বেজায় খুশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তবে তার লক্ষ্য ফাইনাল, এশিয়া কাপ জয়। শনিবার (১ অক্টোবর) সিলেটে উদ্বোধনী ম্যাচের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আমরা যদি র্যাঙ্কিং দেখি সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৯ নম্বরে। এরপর আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে কাছাকাছি মানের।
‘থাইল্যান্ড শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তাদের নিয়ে একটু ভয় পাচ্ছিলাম, টাইট ম্যাচ হবে মনে করেছিলাম। কিন্তু আমাদের মেয়েরা যেভাবে খেলেছে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলেছে, তা দেখে খুবই ভালো লাগছে।’
উদ্বোধনের পর বিসিবি সভাপতি পুরো ম্যাচ দেখেন গ্যালারিতে বসে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক দিন ধরেই ভালো খেলছে। এর আগেও কোয়ালিফাই চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে, এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সাফ গেমসে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তারা তো ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে।’
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের ফাইনালে খেলার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম টার্গেট সেমিফাইনাল, এরপর ফাইনাল। ফাইনালেও ভালো খেলার আশা করছি। এভাবে ভালো খেলতে থাকলে সফলতা আসবেই।
‘এশিয়া কাপ জয়ের পথে ভারত বড় বাধা হতে পারে, গত এক বছরে তারা অনেক ইম্প্রুভ করেছে। তারা ক্রিকেটের পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে হারাচ্ছে। বাংলাদেশও অনেক ইম্প্রুভ করেছে। তাই বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটা টাইট হবে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দুরন্ত ফর্ম ছুটছেই। সম্প্রতি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফেরা দলটি এবার সিলেটে এশিয়া কাপেও করলো দুর্দান্ত সূচনা। গত শুক্রবার এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির উদ্বোধনী ম্যাচেই থাইল্যান্ডকে ৮২ রানে অলআউট করে ৯ উইকেট আর ৫০ বল হাতে রেখে জিতেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছিল থাইল্যান্ড। ১৬ রানে ২ উইকেট হারালেও একটা সময় মোটামুটি ভালো অবস্থানে ছিল দলটি। ১২তম ওভারে ২ উইকেটে ছিল ৫৪ রান।
সেখান থেকে আর ২৮ রান যোগ করতেই থাইল্যান্ডের বাকি ৮ উইকেট তুলে নেন বাংলাদেশি বোলাররা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৬ রান করেন পানিথা মায়া, ওপেনার নাথাকাম চানথামের উইলো থেকে আসে ২০ রান।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন রুমানা আহমেদ। লেগস্পিনিং এই অলরাউন্ডার ৩ ওভারে মাত্র ৯ রান খরচায় নেন ৩টি উইকেট। দুটি করে উইকেট পান নাহিদা আক্তার, সোহেলি আক্তার আর সানজিদা আক্তার মেঘলা।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে খুব বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারে বিনা উইকেটেই ৫২ রান তোলেন দুই ওপেনার শামীমা সুলতানা আর ফারজানা হক।
তাদের ৬৯ রানের জুটিটি ভাঙে শামীমা হাফসেঞ্চুরির একদম দোরগোড়ায় এসে ফিরলে। ৩০ বলে ১০ বাউন্ডারিতে ৪৯ রান করে পাথাওংয়ের বলে বোল্ড হন শামীমা।
তবে বাংলাদেশ যখন জয়ের একদম দ্বারপ্রান্তে- এরপর স্কোর যখন সমতায়, তখন ছক্কা মেরেই ম্যাচ শেষ করেন নিগার সুলতানা। ১১ বলে ১০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ২৯ বলে হার না মানা ২৬ করেন ফারজানা।