বিশেষ প্রতিনিধি:: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তে লাকমা গ্রামে বীরমুক্তিযোদ্ধার সন্তান হালিম খুনের ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে খুনীরা। আসামীদের বাচাঁতে খোদ ওসির বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িতদের নাম অর্ন্তভুক্তি না করার অভিযোগ বাদী বীরমুক্তিযোদ্ধা আক্কেল আলীর। ঘটনায় জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার দেড় মাস পরও কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি তাহিরপুর থানা পুলিশ।
মামলা ও অভিযোগ সুত্র জানায়, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় তাহিরপুর উপজেলার লাকমা(পূর্বপাড়া) গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আক্কেল আলীর পুত্র আব্দুল হালিমকে একই গ্রামের হারুন মিয়ার নেতৃত্বে পূর্ব বিরোধের জের ধরে লাকমা বাজারে যাওয়ার পথে খুনী হারুন মিয়ার বাড়ীর সামনে একা পেয়ে সন্ধ্যা অনুমান ৬ ঘটিকার সময় পথরোধ করে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে। খবর পেয়ে আব্দুল হালিমের পিতা ও বড় ভাই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া আব্দুল হালিমকে মুমুর্ষ অবস্থায় তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তৃব্যরত ডাক্তার তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২টায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মেডিকেল রিপোর্টের দেখা যায়, হালিমের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন আঘাতের কারণে মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা বীরমুক্তিযোদ্ধা আক্কেল আলী ও তার বড় ছেলে আব্দুল হান্নান তাহিরপুর থানায় উপস্থিত হইয়া লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ইখতিয়ার হোসেন একজনের নাম ছাড়া অন্যান্য কাহারো নাম দিয়ে মামলা রুজু করা যাবে না বললে নিহতের পিতা বাধ্য হয়ে লাকমা গ্রামের আব্দুল মালেকের পুত্র হারুন মিয়া (৩১) এর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩/৪জনকে আসামী মামলা রুজু করেন। মামলা দায়েরের ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও কোন আসামীকে না ধরায় ঘটনার সাথে জড়িত একই গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র দিলোয়ার মিয়া (৩৫), মৃত নছর উদ্দিনের পুত্র আবুল কাশেম (৫৫), মৃত আব্দুল মালেকের পুত্র আজিজুল (৪০) ও হেকমত আলীর পুত্র আইয়ুব নুর এর নাম উল্লেখ করে গেল ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ইং তারিখে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত আবেদন করেন এবং হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানান। এ ঘটনায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কোন আসামীকে গ্রেফতার না করায় আসামীরা বাদীকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিয়ে আসছে বলে বাদীর অভিযোগ। মামলার বাদী বীরমুক্তিযোদ্ধা আক্কেল আলী কেঁদে কেঁদে জানান, জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলাম বলেই এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল কিন্তু আমার ছেলে হত্যার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও হত্যায় জড়িত কোন আসামীকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। আমার ছেলেকে যারা খুন করেছে তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের দাবী জানাই। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা আক্কেল আলী বলেন, আমার ছেলে আব্দুল হালিমকে যারা প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করেছে তাদের গ্রেফতারের দাবী জানাই। তিনি আরও জানান, আসামীদের গ্রেফতার না করায় অন্যান্য আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আমাকে হুমকি দিচ্ছে যে, যদি মামলাটি তুলে না নেই তা হলে আরও কাউকে খুন করবে। আমি ন্যায় বিচার চাই। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা চাই। নিহত হালিমের দেড় মাসের একটি শিশু সন্তান রয়েছে।
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইখতিয়ার হোসেন এর বক্তব্য জানতে বার বার কল দিলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রিপন কুমার মোদক জানান, তাহিরপুরের লাকমা গ্রামে বীরমুক্তিযোদ্ধার ছেলে আব্দুল হালিম খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। খুনের প্রধান আসামী হারুন মিয়া নাকি ভারতে পালিয়ে গেছে। ঘটনার সাথে অন্যকেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।