অনুসন্ধান নিউজ :: ভয়াবহ করোনাভাইরাস থেকে সিলেটে স্কুলের শিক্ষার্থীদের ‘সুরক্ষিত’ করতে তাদেরকে ভ্যাকসিন (টিকা) প্রদান শুরু হয়েছে। আজ সোমবার সকাল থেকে সিলেট মহানগরীর চারটি স্কুলে এই ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিক অবস্থায় ২৫ হাজার স্কুলশিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ধাপে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এবং পুলিশ লাইনস হাইস্কুলে শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া জন্মনিবন্ধন সনদের বাধ্যবাধকতাও এখন তুলে দেওয়া হয়েছে। এ চারটি স্কুলে অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে করোনার ভ্যাকসিন নিচ্ছে। সিংহভাগ শিক্ষার্থীই ইনজেকশন নিয়ে ভয় না পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
সরকারি অগ্রগ্রামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী স্মিতা পারমিত শ্রেয়া বলে,‘ইনজেকশন নিতে ভয় লাগেনি। কারণ, এর আগেও অনেকবার ইনজেকশন নিয়েছি, রক্ত পরীক্ষা করিয়েছি। কিন্তু এর আগে প্রতিবার বাবা-মা সাথে ছিলেন, আজকেই প্রথমবার বাবা-মা ছাড়া ইনজেকশন নিলাম।’
এই শিক্ষার্থী বলে, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে করোনার ভয় অনেকটা কমে গেছে। এতো দিন তো ভয়ে ছিলাম, আমরা ভ্যাকসিন নেইনি। করোনা হলে কি করবো!’
একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস তানিয়া বলে, ‘ইনজেকশন আগেও অনেকবার নিয়েছি। তাই এবার ভ্যাকসিন গ্রহণে ইনজেকশন দিতে ভয় লাগেনি। ভ্যাকসিন গ্রহণ করায় এখন করোনাভাইরাস থেকে আমরা অনেকটাই সুরক্ষিত।’
জানতে চাইলে সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থীদের ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে। চারটি স্কুলে প্রতিদিন ৬০০ করে ২৪শ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। কেন্দ্রগুলোতে আমাদের লোকবল রয়েছে। মহানগরীর ২৫ হাজার শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।’
ডা. জাহিদ জানান, জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে জটিলতা থাকায় এটির বাধ্যবাধকতা বাদ দেওয়া হয়েছে। স্কুলের রেজিস্ট্রার অনুসারে শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ১২০ শিক্ষার্থীকে ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। এসব শিক্ষার্থী কোনো সমস্যায় না পড়ায় পরবর্তীতে সারাদেশের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অফিদফতর (মাউশি) গত ১৭ অক্টোবর মাধ্যমিকের স্কুলশিক্ষার্থীদের তথ্য চায়। নভেম্বরের শুরুতে ১ লাখ ৭০ হাজার স্কুলশিক্ষার্থীর তথ্য পাঠায় জেলা শিক্ষা অফিস।
সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এএসএম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ফাইজারের ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় দিতে হয়। বেশিরভাগ স্কুলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ নেই। আপাতত মহানগরীর চারটি স্কুলে ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে। অন্যান্য স্কুলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ প্রস্তুতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ধাপে সেগুলোতেও ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’